দিয়াজ হত্যা : আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৭

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের (চবি) সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর, চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ ১০ আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সি মশিউর রহমান এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। অন্য এক আদেশে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

দিয়াজের বড় বোন ও এ মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুবাঈদা সারোয়ার চৌধুরী নিপা আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য পাসপোর্ট জব্দেরও আদেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই আসামিরা দেশত্যাগ করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। তাই আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালতের এ নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামশেদুল আলম, সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সদ্য স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, অর্থনীতি বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের রাশেদুল আলম জিসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের আবু তোরাব পরশ, অর্থনীতি বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের মো. মনছুর আলম, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের আব্দুল মালেক, ইতিহাস বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের আরিফুল হক অপু ও বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের মো. আরমান।

আসামিদের মধ্যে পরশ, মনছুর ও মালেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি, মিজানুর রহমান আপ্যায়ন সম্পাদক, মো. আরমান সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অপু সহ-সম্পাদকের পদে ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ দিয়াজের মৃত্যুর কারণ ‘শ্বাসরোধে হত্যা’ উল্লেখ করে দীর্ঘ ৭ মাস পর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এর প্রেক্ষিতে সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে।

এর আগে কেন্দ্রীয় এ নেতার রহস্যজনক মৃত্যুর পর প্রথম ময়নাতদন্তে এটিকে আত্মহত্যা উল্লেখ করেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। যদিও তার পরিবার প্রথম থেকেই বলে আসছে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি করে আসছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে দিয়াজ সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর ২১ নভেম্বর দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এতে ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে- এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে চিকিৎসকরা মত দিয়েছেন।

পরবর্তীতে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।

আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের মরদেহ তুলে আবারও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিলে গত ১০ ডিসেম্বর পুনঃময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়।

আবদুল্লাহ রাকীব/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।