আস্থা হারাচ্ছে ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন চলাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ‘প্রক্টরিয়াল টিম’ এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, চাইলেই প্রক্টরিয়াল টিমের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করে বরং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি করেছেন।
এছাড়া সিনেট নির্বাচনের সময়ও একই অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এদিকে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।
তবে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা বাম সংগঠন। কোন আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন করলে সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তাদের আন্দোলনটা যখন কোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে হয় তখন সেটি সন্দেহজনক।
দেখা গেছে, বিগত প্রায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অনেকটা ঠান্ডা রয়েছে। ঘটেনি বড় ধরনের কোন অঘটন, যার কারণে প্রক্টরিয়াল টিমের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের মধ্যেও ছিল স্বস্তি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে।
২২ মে সিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকসু নির্বাচন দাবির আন্দোলনে ধস্তাধস্তির ঘটনা পরিস্থিতি আরও প্রকট করে তোলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক শ্রদ্ধাসুলভ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যত্যয় ঘটেছে সেখানে। এর আগে নিকট অতীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরাসরি কোন ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেনি।গত শনিবার সিনেটের বিশেষ অধিবেশন চলাকালে প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ও জুনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। যেখানে ছিল যৌন হয়রানির দায়ে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে আগ্রহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। প্রক্টরিয়াল টিমের বেশ কয়েকজন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের ধস্তাধস্তির বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি কেউ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মারমুখী অবস্থায় শিক্ষকরা সেদিন হাজির হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সুলভ আচরণ দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ করার সুযোগ দেয়া উচিৎছিল প্রক্টরিয়াল টিমের। কিন্তু তারা সেটি না করে আন্দোলনকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে কোনভাবেই কাম্য নয়। ডাকসুর মতো নৈতিক আন্দোলনে তারা বাধা দিয়েছেন। এর আগেও চারুকলা অনুষদে ভারতীয় হাইকমিশনারের আগমন উপলক্ষে বাম সমর্থিত সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষকদের কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। সে সময়ও কয়েকজন শিক্ষক মারমুখী ছিলেন বলে দাবি তাদের, যা ছাত্র-শিক্ষকের শ্রদ্ধার জায়গা নষ্ট করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রক্টরিয়াল টিম একজন চালান না আরও কয়েকজন আছেন, সেটি বলা মুশকিল। যেকোনো সময় একমাত্র প্রক্টরকে পাওয়া যায়, সহকারী প্রক্টররা তেমন কোন কাজ করেন না। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার সময়ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর আগেই। পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে তরুণীর শ্লীলতাহানির সময় দাবা খেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলীর বিরুদ্ধে।
পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী উম্মে হাবিবাহ বেনজীর বলেন, প্রক্টরিয়াল টিম স্টুডেন্টদের পক্ষে ও ক্যাম্পাসের স্বার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকলেও বাস্তবে তা ভিন্ন। আমরা দেখছি বরাবরই ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াই হচ্ছে তাদের কাজ। যেকোনো আন্দোলনে রবিউল ইসলাম স্যারকে দেখা যায় তিনি সবসময় মারমুখী অবস্থায় থাকেন। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের প্রতি কোন আস্থা নেই। তারা প্রতিনিয়ত আস্থাহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তাদের কাছে আস্থাহীনতার কথা মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব যেটি ছিল সেটি আমরা পালন করেছি। কিভাবে নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটি আমাদের জানা আছে। তিনি দাবি করে বলেন, আন্দোলন করার সময় তারা আমার শরীরে দুটো লাথি দিয়েছে। আর দুটো মেয়ে বারবার আমার গায়ে এসে পড়ছে আর ক্যামেরার সামনে তাকিয়ে আছে। অতর্কিতভাবে তারা শরীরে এসে পড়ছে। ইজ্জত বিকিয়ে দিয়ে একজন যদি আরেকজনের বদনাম করতে যায় তাহলে পারেই। এটা রাস্তায়ও যে কেউ চাইলে করতে পারে। আর এটা বললেই তো হবে না এখানে আমাদের অনেক শিক্ষক ও ছাত্ররা ছিল। বারবারই তারা আমাকে আঘাত করেছে।
চারুকলার এই শিক্ষক বলেন, কোন শিক্ষক তার ছাত্রকে আদব-কায়দা শেখানো কিংবা সংশোধন করতে গেলে যদি হয় সন্ত্রাসীর মতো হয় তাহলে এগুলোর ব্যাখ্যা আছে। যারা এগুলো প্রচার করছে তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্য কারও নাম না এসে বারবার আপনার নাম আসছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয় এখানে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। তাদের কোন ইস্যু থাকতে পারে। সেটি আমার জানা নেই। সিনেট নির্বাচনের দিনও যা হয়েছে সেখানে অন্য আরেকজন শিক্ষকের নামটাও আমার নামে চলে আসে। আমার নামটা মুখস্ত আছে, কোন কারণে আমাকে চিনেও। যার কারণে আমার নামটা বলে দিচ্ছে।’
তার মতে, কোনো ভয়ংকর ক্ষতি তিনি করেননি। রবিউল ইসলাম বলেন, সেখানে যতগুলো শিক্ষক ছিল সবার সঙ্গে কমবেশি ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমার নামটা কেন হাইলাইট হচ্ছে সেটির পিছনে নিশ্চয় তাদের কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আর অন্য শিক্ষকদের গায়ে পড়েনি আমার গায়ে পড়ছে কেন সেটিরও নিশ্চয় কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা খুবই দুঃখজনক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন ও শিক্ষকদের হেনস্তা করা। সারাবিশ্বের কাছে বদনাম করে দেয়া এটা নিশ্চয় ভালো নয়।
সার্বিক বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ বলেন, ওরা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেহেতু তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সব কিছু বের হয়ে আসবে। আমি যেহেতু সেখানে উপস্থিত ছিলাম, সেখানে আমি যা দেখেছি, তাদের বক্তব্যের সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। এটা তদন্ত কমিটির বিষয়, তারা তদন্তের মাধ্যমে সব বের করে আনবেন। এটা নিয়ে এখন আর না বলাই ভালো।
এমএইচ/ওআর/বিএ