অনবদ্য কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন ঢাবি উপাচার্য


প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ২৪ জুন ২০১৭

অর্থের জন্য মানুষ কী না করে! নিজের প্রাপ্যতো ছাড়তে চায় না কেউই। আবার যেখানে অর্থ সেখানে নীতিনৈতিকতাকে ভুলে নিজেকে অনিয়মের কাছে সঁপে দেয়ার নজিরও এ সমাজে পাওয়া যায়। পার্থিব জীবনে বেশির ভাগ মানুষই ছুটে অর্থের পিছে। কিন্তু গুটিকয়েক মানুষ রয়েছে যারা সম্পূর্ণ আলাদা। যুগ যুগ ধরে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা। এমনই এক অনবদ্য কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এ কর্মের প্রকাশ করেন। সেদিন কোষাধ্যক্ষ তার বাজেট বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, `একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না যে, এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নরেশ সেনগুপ্তের মতো ত্যাগী অধ্যাপক শিক্ষকও আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সবাই বিভিন্ন পর্যায়ের সভার জন্য ‘সিটিং অ্যালাউন্স’ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন। শুধু ঢাবি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কোনো সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ করেননি। আমার হিসাবে গত সাত বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করেছেন। উচ্চ নৈতিকতার জন্য এটা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নয় কি?’

এ নজিরবিহীন ঘটনায় সর্ব মহল থেকে প্রশংসিত হয়েছেন আরেফিন সিদ্দিক। শিক্ষার্থীরা আরেফিন সিদ্দিকের অন্যান্য গুণাবলিও প্রকাশ করেন। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তার বাসভবনে যেকোনো মানুষের জন্য উন্মুক্ত করাসহ নিজের বিভাগে ক্লাস নেন তিনি।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, এটি নিঃসন্দেহে ইতিহাস হয়ে থাকবে, যা অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। যেখানে মানুষ অর্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না সেখানে আমাদের ভিসি স্যার প্রাপ্য অর্থও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে রেখে দিয়েছেন।

সাংবাদিক শরীফুল হাসান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘খবরটা দেখে মুগ্ধ হলাম। আমাদের আরেফিন স্যার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই যুগের উপাচার্যরা যখন নিজের সব প্রাপ্য নিয়ে উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপ্যায়ন ভাতা, বৈশাখ ভাতা, এই ভাতা সেই ভাতা আত্মসাৎ করেন তখন আমাদের আরেফিন স্যার গত সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিলেও প্রাপ্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা নেননি। আবার স্যার কাউকে এ খবরটা জানতেও দেননি। আমি সব সময় বলি, আমার দেখা সেরা মানুষদের একজন আরেফিন স্যার। আপনাকে স্যালুট।’

ফয়সাল ইয়াসির নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেদারছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদকে লুটে নেয়া উপাচার্যদের ভিড়ে এ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’ অথচ এমন অনবদ্য কাজ করার পর সবাই তাকে প্রশংসায় ভাসাক তাতেও বিশ্বাসী নন আরেফিন সিদ্দিক স্যার। বললেন, ‘সিটিং অ্যালাউন্স না নেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হোক চাইনি।’ এর থেকে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রশংসিত হয়েছেন সর্বমহলে। উপাচার্য হয়েও ক্লাস নিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন বছরের শুরুতে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিয়মিত কাজ করেন তিনি।

তবে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। এ অনবদ্য কাজ করার পরও রাজু আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী কমেন্টে লেখেন, ‘স্যার কিন্তু খুব ভালো জানেন কীভাবে সংবাদে থাকা যায় আর কখন সংবাদে থাকতে হয়। যাই হোক, স্যারের মেয়াদ সম্ভবত শেষের পথে। এ নিয়ে আমি কিছু কমু না।’ রফিকুল ইসলাম অনিক নামে একজন লিখেছেন, ‘ভালো তো, ক্যাম্পাসটাকে জাহান্নাম বানিয়ে এখন হুজুর।’

এছাড়া শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন সমালোচনা রয়েছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলে ভাঙনের জন্যও তাকে দায়ী করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলা অনুষদের এক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান যত ভালো করেছেন তার থেকে বেশি ক্ষতি করে গেছেন, যা আগামী ১০-১৫ বছর পর এ বিশ্ববিদ্যালয় অনুভব করবে।

এমএইচ/এমআরএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।