ঢাবির সিনেটে আওয়ামীপন্থীদের দুই প্যানেল, বিএনপির এক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বাম সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের দুটি প্যানেলের নাম জমা পড়েছে।
আর বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল জমা দিয়েছে একটি প্যানেলের নাম। বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে এসব প্যানেলের নাম জমা দেয়া হয়।
এদিকে দুই প্যানেল জমা দেয়ায় নীল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ছিল নির্বাচনী প্যানেল জমা দেয়ার শেষ দিন। তাই দল দু’টি এর আগ থেকেই নির্বাচনী প্যানেল তৈরি নিয়ে কাজ করছিল। গত ৩ মে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর নীল দল সর্বপ্রথম বৈঠকে বসে গত ৭ মে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংগঠনটির সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষকরা অংশ নেন।
কিন্তু সেখানে প্যানেল গঠনের আগে নীল দলের অবৈধ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন অধিকাংশ শিক্ষক।
এতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের অনুসারীরা। তারা প্যানেল ঘোষণার উপর জোর দেন। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে উপাচার্যপন্থী এক সিনিয়র শিক্ষক অন্য একজন শিক্ষকের উপর তেড়ে আসেন।
এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ওয়াক আউট করে বৈঠকস্থল থেকে বের হয়ে যান।
নীল দলের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বুধবার প্যানেল নিয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে নীল দলের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক পর্যায়ে ৪০ জনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন শিক্ষক নিজেদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন। বাকি ৩৭ জনের মধ্য থেকে প্রথম সারির ৩৫জন নির্বাচন করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।কিন্তু এই তালিকা প্রণয়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠে বৈঠকে।
নীল দল সূত্র জানায়,বৈঠকে একটি গ্রুপ দাবি করেন এই তালিকায় অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। তারা দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের বাইরের লোকদেরও এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে শুধু মাত্র উপাচার্যের দল ভারী করার জন্য। তাই তারা তালিকাটি সংশোধন করার দাবি তোলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার নীল দলের আহ্বায়ক পূর্ণ প্যানেল জমা দিয়ে আসেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে। বিরোধীপক্ষ জমা দেয়া নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবি তুললে আহ্বায়ক নাজমা শাহীন বলেন, জমা দেয়া হয়ে গেছে তাই নাম প্রকাশ করা যাবে না।
এদিকে বিরোধীপক্ষের একাধিক শিক্ষক জানান, গোপনে অনুপ্রবেশকারীদের নাম প্যানেলে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। তাই প্যানেলের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাজ করছেন দলটির বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। উপাচার্যের দল ভারী করতেই অনুপ্রবেশকারীদের স্থান দেয়া হয়েছে অভিযোগ করেন তারা।
পরবর্তীতে বিরোধী পক্ষ সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী একটি প্যানেলের তালিকা জমা দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে।
এদিকে, নীল দলে যখন চলছে মান অভিমানের হাওয়া, ঠিক সে সময় নিজেদের মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করেছে বিএনপি জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সকাল ১০টায় আমাদের পূর্ণ প্যানেলের নাম জমা দিয়েছি। সর্বসম্মতিক্রমে এটি তৈরি হয়েছে।
এর আগে গত ৩ মে বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২০(১)(এল) এবং (৩) অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আগামী ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এমএইচ/এসএইচএস/এমএমএ/জেআইএম