বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টারের বেশি ভর্তি নিষিদ্ধ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বছরে দুটি সেমিস্টারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। প্রতি সেমিস্টারের জন্য নির্ধারিত কোর্স ও কারিকুলাম যথা সময়ে শেষ করতে হবে। একইসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছয়টির বেশি প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয়া হবে না।
উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, নিকট অতীতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই অবস্থায় কমিশনের অনুমোদন ব্যতিত কোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে কমিশন এ কোর্স বা প্রোগ্রামের অনুমোদন দেবে না এবং ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর দায়ভার কমিশন নেবে না।
কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পূক্ত হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত কোর্স বা প্রোগ্রামের নাম পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইউজিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় কম্পিউটার সাইন্স, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মেসির মতো কঠিন বিষয় খুলে বসেছে।
যা চালানোর মতো ন্যূনতম সক্ষমতাও তাদের নেই। পরবর্তিতে এসব প্রোগ্রাম অনুমোদনের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা দেখা হবে। সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলেও ছয়টির বেশি প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয়া হবে না। কোর্স বা প্রোগ্রাম অনুমোদনের আগে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তা তদন্ত করা হবে। তাদের পরামর্শের বাইরে কোনো কোর্স বা প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয়া হবে না।
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময়ে ভর্তি বাণিজ্যের প্রমাণ মিলেছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক না থাকলেও প্রতিবছর তিন থেকে চারটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে মেধা যাছাইও করছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির (বিওটি) সদস্য ও ভিসি কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। যার অনুমোদন নেই ইউজিসির।
এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দুই, তিন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বসিয়ে পাঠদানের প্রমাণও রয়েছে। সেমিস্টারের নির্ধারিত কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ইউজিসি থেকে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সর্তক করে চিঠি দেয়ার পরেও সংশোধন হয়নি। গত বছর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অনুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা এবং সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স কারিকুলাম শেষ না করেই পরীক্ষা নিচ্ছে। এছাড়া কোনো ধরনের অবকাঠামো ছাড়াই পাঁচ ছয়টি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের দুটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এটাকে সেমিস্টার পদ্ধতি বলে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিনটি সেমিস্টারে ভর্তি করার পরেও তারা এটাকে সেমিস্টার বলে। আসলে এটি হওয়ার কথা ছিল টার্ম পদ্ধতি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কী হয়েছে, তা বাদ দিয়ে এখন থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা পাঠিয়েছি।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৯৬টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫টিতে মতো শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এমআরএম/এএইচ/জেআইএম