প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দিয়াজের মা
ময়নাতদন্তে আসা আত্মহত্যার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে হত্যা মামলার পর ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা বলেছেন, এটি আত্মহত্যা নয়। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি বলেন, আমি কখনো আমার ছেলের গায়েও হাত তুলিনি। অত্যন্ত লাজুক ছিল। সে সারা রাত জেগে পড়াশোনা করতো। ও আমার সম্পদ ছিল না, পুরো দেশের সম্পদ ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফানের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে দিয়াজের মা বলেন, ‘আমার ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। সে সুস্থ রাজনীতি করতো। অস্ত্রের রাজনীতি করে নাই। যদি অস্ত্রের রাজনীতি করতো, সন্ত্রাসের রাজনীতি করতো তাহলে তার কাছে একটা অস্ত্র হলেও থাকতো। আমি জানি আমার ছেলেকে কেন হত্যা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলে কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ওর নামে যাতে কোনো অপবাদ বা কলঙ্ক না উঠে। তার নামে কলঙ্ক উঠলে পুরো ছাত্রলীগ কলঙ্কিত হবে। এমন কাজ করতে পারে না। ওরা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার ছেলেকে সরিয়ে দিতেই এ হত্যা। ওরা হয়তো ভেবেছিল ওকে (দিয়াজ) সরিয়ে দিলে পোস্ট খালি হবে। তারা সে পোস্ট পাবে।’
তিনি অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, ‘অফিসে যাওয়ার সময় টিপুর গ্রুপের কর্মীরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করতো। আমি তাদের বলতাম বাবারা আমার কষ্টার্জিত সংসার। তোমরা খোঁজ নিয়ে দেখ আমার একটা সঞ্চয় হিসাব ছাড়া আর কিছু নেই। কোন এফডিআর ব্যাংক ব্যালান্সও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাইদা সরওয়ার নিপা। এ সময় তার পাশে আরো উপস্থিত ছিলেন তার মেজো বোন সাঈদা সরওয়ার নিশা, ছোট ভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে দিয়াজের বোন বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতনি। যাদের নামে আজ আদালতে মামলা করা হয়েছে তারা আমাদের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমার মা চাঁদা দিতে না পারায় গত ৩০ অক্টোবর রাতে আমাদের বাসায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করে তারা। লুটপাটের মামলা করতে গেলে থানায় আমাদের অপমান করা হয়। হাটহাজারী থানা পুলিশ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগও করে তিনি। পরে গত ৪ নভেম্বর পুলিশ চুরির মামলা নেয়।
তিনি আরো বলেন, মামলা তুলে না নিলে তারা আমার ভাইকে হত্যার করে মরদেহ গুম করে ফেলারও হুমকি দেয়। আমার ভাইকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন আমার মা শহরে জেলা পরিষদে রত্নাগর্ভা সম্মাননা নিতে এসেছিল।
এটি আত্মহত্যা নয় উল্লেখ দিয়াজের মা আরো বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা। তাকে জখম করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে ব্যক্তিগত জীবনে বিপর্যস্ত ছিল না। ঘটনার আগের দিনও সুবর্ণজয়ন্তীতে সে বন্ধুদের সঙ্গে হাসি খুশি ছিল। কোন বিষণ্ণতার ছাও ছিল না। ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করেই হত্যার দিন থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালায়।
‘হত্যাকারীরা প্রভাভশালী। তারা নানা ভাবে প্রভাবিত করতে চাইছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের আগেই সভাপতি আলমগীর টিপু একটি সংবাদ মাধ্যমকে বিবৃতি দেয় দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি’ যোগ করেন দিয়াজের মা।
এএম/পিআর