দিয়াজের শরীরে আঘাতের চিহ্ন : পরিবারের দাবি হত্যা
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফানের শরীরের তিন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা বিলকিস। তবে ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিতভাবে এগুলো আঘাতের চিহ্ন কিনা- তা বলা যাচ্ছে না।
ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) নেয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের তোপের মুখে রাত ১টার দিকে তিনি এসব কথা বলেন। রোববার দিবাগত রাত ১২টা ২৫ মিনিটে সিলিং ফ্যান থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ নামানো হয়।
তিনি বলেন, গলার উভয় পাশে আঁচড়ের চিহ্ন আছে। তবে বাম পাশে আঁচড়ের পরিমাণ বেশি। এছাড়া হাতের কব্জিতে ও পায়েও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এদিকে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উদ্দেশ্য করে দিয়াজের মা জোবায়দা খানম চৌধুরী বলেন, আমার ছেলেকে প্রশাসন হত্যা করেছে। আমার ঘরে যখন হামলা করে, যখন প্রশাসনের মদদে ভাঙচুর-লুটপাট করে তখন হাটহাজারী থানা পুলিশের ওসি বেলাল মামলা নেননি। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার সন্তানকে মেরেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়াজের মা আরো বলেন, টেন্ডারের টাকার জন্য সহকারী প্রক্টর আনোয়ার আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিলো। তার কোটি টাকা প্রয়োজন, আমাকে বলতো আমি দিতাম।
এ সময় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা বিলকিসের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা।
তিনি বলেন, আমরা ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর এ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট এলাকায় চার তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন দিয়াজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। তাদের স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার সময় বাসায় কেউ ছিল না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা টেন্ডার দ্বন্দ্বে চবি ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এর একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান সভাপতি আলমগীর টিপু এবং নেপথ্যে থেকে আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান। তারা উভয়ই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
এর জেরে গত ৩০ অক্টোবর দিয়াজের বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এ ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন দিয়াজের মা।
দিয়াজের রাজনৈতিক অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শোভন দাস জাগো নিউজকে জানান, বাসায় ভাঙচুরের পর দিয়াজ ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তার ওপর অনেক ধরনের চাপ ছিল। কিন্তু এজন্য দিয়াজ ভাই আত্মহত্যা করবেন, এটা আমরা মানতে পারছি না। তাকে কেউ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে কিনা- সেটা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও ছিলেন দিয়াজ ইরফান। এ সময় তাকে হাসিখুশিই দেখা গিয়েছিল।
অপরদিকে, দিয়াজের মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার অনুসারীরা বাসার সামনে দোষীদের শাস্তির দাবিতে নানা প্রতিবাদী স্লোগানও দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বক্তব্য জানতে প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরীর মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু জাগো নিউজকে জানান, দিয়াজের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনেছি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।
উল্লেখ্য, দিয়াজ ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। গত বছর তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক পদ পান।
এফএ/এনএইচ/এমএস