বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তির শিকার হাজারো শিক্ষার্থী


প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে এবার আগেই অনার্স ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

কলেজগুলো ভর্তির সময় মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল নম্বরপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা নেয়ায় এ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে ভর্তি হয়েছে তারা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও পরীক্ষা দিতে পারছে না। কারণ সেখানেও প্রবেশপত্রের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে নিতে হচ্ছে। আর সেটি জমা রেখেছে কলেজগুলো।

তবে যারা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে শুধু তারাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে। এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও কলেজগুলো নিজের ইচ্ছেমতো এ পদ্ধতি চালু করেছে। এ কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে `এ` এবং `বি` ইউনিটের পরীক্ষা শেষও হয়েছে।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুদের প্রবেশপত্রের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের ২ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভর্তি করা হয়েছে।

সেখানে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল নম্বরপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা নেয়া হয়েছে। আর করে মহাবিপাকে পড়েছে হাজারো ভর্তিচ্ছু। যদিও এর আগে ঢাবি, জবি, রাবি এবং চবির ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের প্রবেশপত্রের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে হলে প্রবেশ করতে হয়েছে।

এমনকি জাবি, ইবি, শাবি, হাবিপ্রবিসহ পরীক্ষা না হওয়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে, কুমিল্লা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা সাজু আহমেদ জাগো নিউজকে জানায়, গত ৯ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিতুমীর কলেজে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড না থাকায় আমাকে বেরোবির ‘এ’ ইউনিটে পরীক্ষায় অংশ নিতে দিলেও ফলাফল আসবে না বলে জানানো হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অপর এক শিক্ষার্থী জানায়, মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি দেখিয়েছি কিন্তু তারপরও ফলাফল কেন আসবে না? আমার মতো অনেকেই এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এই ব্যাপারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

মাগুরা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা রবিউলের বাবা জাগো নিউজকে বলেন, গত ১০ নভেম্বর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল নম্বরপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা দিয়ে ছেলেকে ঢাকা কলেজে ভর্তি করেছি। অন্যদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার হলে প্রবেশে উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে বলা হয়েছে। এখন এতোদূর থেকে এসে ছেলে পরীক্ষা দিতে পারছে না। এটা ছেলে-মেয়েদের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা অনেক চাপে থাকে তার উপর আবার এমন হয়রানি।

তিনি আরো বলেন, ছেলে-মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করা কতটা যৌক্তিক? আর এই দায়টা কে নিবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেরোবি নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়? একটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা নাজুক হলে এমন হ য ব র ল হতে পারে। তাই এই বিষয়ে অতিদ্রুত অাশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি কামনা করছি।

এ ব্যাপারে বেরোবি ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব এবং রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবির জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া কোনো ভাবেই পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়ার কথা নয়। যদি কোনো শিক্ষক পরীক্ষা নিয়ে থাকে সে বিষয়ে আমি অবগত নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী জাগো নিউজকে জানান, মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া যদি কেউ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে এমন প্রমাণ পেলে তার উত্তরপত্র অবশ্যই বাতিল করা হবে। ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই উচ্চ মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা নিয়মের বাইরে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি না। নিয়ম মেনেই সব করা হচ্ছে।

অপরদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোবাশ্বেরা খানম জাগো নিউজকে বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যদি কোনো কলেজ নিয়ে থাকে তাহলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এসএসসি ও এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা নেয়ায় ভর্তিচ্ছুরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমি জানি না।

এমএএস/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।