নবীনদের অপেক্ষায় শাবিপ্রবি


প্রকাশিত: ০৫:১৬ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৬

এরই মধ্যে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এখনো শুরু হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সব শিক্ষার্থী চায় নিজের পছন্দ কিংবা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় থাকে বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিকৃতি হিসেবে বেশ সুনাম কেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১৫ সালে স্পেনভিত্তিক ‘ওয়েবমেট্রিক্স র‌্যাঙ্কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় শাবিপ্রবি।

Sust
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু হয়ে গেছে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হবে ১০ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ নভেম্বর।

শুরুর কথা
১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২০ একর জমির ওপর তিনটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৭টি বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। রয়েছে দুটি ইনস্টিটিউট। আবাসিক সুবিধার জন্য ছাত্রদের তিনটি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি আবাসিক হল। এছাড়া রয়েছে পাঁচটি একাডেমিক ভবন ও দুটি প্রশাসনিক ভবন।

শিক্ষা কার্যক্রম
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সমন্বিত সম্মান কোর্স চালুর পাশাপাশি ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক কোর্সে সেমিস্টার পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়। তাছাড়া বিশ্বের নাম করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে সিলেবাস।

Sust

সেশনজট যেখানে অতীত 
গত কয়েক বছর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সে সময় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা সেশনজটে পড়লেও এখন তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বেশিরভাগ বিভাগে গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এক বছরের কোর্স আট মাসেই শেষ করে দিয়েছে।

উদ্ভাবনে এগিয়ে
২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মুঠোফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে ভর্তির কার্যক্রম চালু, প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তারবিহীন নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই সুবিধা চালু করা, নিজস্ব ডোমেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল সার্ভিস চালু, দেশের প্রথম ও পুর্ণাঙ্গ বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পীপিলীকার উদ্ভাবন, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বা ই-পেমেন্ট সার্ভিস চালু, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যানবাহনের অবস্থান নির্ণয়ের ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন এবং সর্বশেষ মানববিহীন ড্রোন আবিস্কার করে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

অপরূপ সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস:
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সবুজ অরণ্য আর টিলায় ঘেরা প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রাস্তার দু`পাশে সারি সারি মেহগনি, কড়ই, জারুল, নারকেল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্যের সঙ্গে নিজেদের বিলীয়ে দেন কেউ কেউ। এখান থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এছাড়া রাস্তার মাঝ বরাবর নাগেশ্বর গাছ লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডিভাইডার। ক্যাম্পাসেও রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা৭১’।

Sust

সহশিক্ষা কার্যক্রমেও এগিয়ে :
একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অনুমোদিত ৫৭টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠন। দেখা যায়, সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই আছে। এছাড়া সাংবাদিকতা বিভাগ না থাকলেও এখানে সাংবাদিকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব রয়েছে যা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ আস্থার সঙ্গে কাজ করছে।

রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোকে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রক্টর শাকিল ভূইয়া।

মোট আসন:
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা ১৬৫৫টি। এর মধ্যে সাধারণ আসন ১৫৬৩টি এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, বিকেএসপি এবং পৌষ্যদের জন্য মোট ৯২টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে।

আবেদনের যোগ্যতা:
বিজ্ঞান শাখা থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় ইউনিটে এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য একজন শিক্ষার্থীর এইচএসসি বা সমমান ও এসএসসি বা সমমান উভয় পরীক্ষায় নূন্যতম জিপিএ ৩.০ সহ মোট ৬.৫ থাকতে হবে। জি.সি.ই ‘ও’ লেভেলে কমপক্ষে ৩টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৫টি বিষয়ে পাস এবং জি.সি.ই ‘এ’ লেভেলে কমপক্ষে ২টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৩টি বিষয়ে পাস থাকতে হবে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পয়াড, অন্যান্য স্বীকৃত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে স্বর্ণ, রৌপ্য ও বোঞ্জ মেডেল প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে।

Sust

আবেদন প্রক্রিয়া:
ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্যে একটি প্রিপেইড টেলিটক নম্বর ফোন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম (SUST), এইচএসসি বা সমমান শিক্ষা বোর্ডের নামের কোড, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, পাশের সন এবং এসএসসি বা সমমান শিক্ষা বোর্ডের নামের কোড, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, পাশের সন, সাব-ইউনিটের `কী` ওয়ার্ড (A, B1, B2,) লিখে ১৬২২২ নম্বরে SMS করতে হবে।

(উদাহরণ: SUST<স্পেস>SYL<স্পেস>123456<স্পেস>2016<স্পেস>SYL<স্পেস>654321<স্পেস> 2014<স্পেস> B1)|

ভর্তি পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষা পদ্ধতি:

৭০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় দেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বহু নির্বাচনী পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ‘এ’  ইউনিটের পরীক্ষা ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় এবং ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা একই দিন বিকেল ২টা ৩০মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রাঙন ছবি ও দুই কপি প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে আনতে হবে।

এছাড়া ভর্তি সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে ০১৫৫৫৫৫৫০০১-৪ হটলাইনে ফোন করে অথবা [email protected] এ ই-মেইল করে যোগাযোগ করা যাবে। অথবা www.sust.edu/admission এ ভিজিট করে জানা যাবে।

এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।