বেরোবি ছাত্রদলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা-সরকারি চাকরিজীবী!

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অছাত্র, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও সরকারি চাকরিজীবীদের নেতৃত্বে চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব কার্যক্রম। এতে দলীয় কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে ক্ষুব্ধ ছাত্রদলের সংগঠনটির তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীরা।
জানা যায়, ২০২১ সালে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে ইংরেজি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আল ইসলামকে আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের রাশেদ মন্ডলকে সদস্য সচিব করা হয়েছিল। ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অছাত্র, চাকরিজীবী ও জেলা নেতাদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ সেই সময়ে উঠেছে। বর্তমানে এই কমিটির আহ্বায়ক আল-আমিন ইসলাম একাধারে রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সহ-সভাপতির দায়িত্বেও আছেন। যার পড়ালেখা শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে।
অন্যদিকে বর্তমানে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন রাশেদ মন্ডল। তিনি বর্তমানে একটা সরকারি চাকরি করেন। রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চাকরিরত। তার পদবি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর (শপ) সিভিল। এছাড়া ওই কমিটি বাকি ৯ জনের কেউ আর ক্যাম্পাসে নেই। কেননা তাদের আর কারও ছাত্রত্ব নেই। অনেকে চাকরি করছেন।
- আরও পড়ুন
বেপরোয়া ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা - ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার
কমিটি দেওয়ার পর তাদের কোনো কার্যাবলি বিশ্ববিদ্যালয় ও দলের নেতাকর্মীরা কেউ দেখেনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে কমিটির শুধু আহ্বায়ক আর সদস্য সচিবকেই ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে। অভিযোগ উঠেছে, কমিটি হওয়ার পর তাদের কোনো কাজ বিশ্ববিদ্যালয় ও দলের নেতাকর্মীদের চোখে পড়েনি। কিন্তু হঠাৎ ৫ আগস্টের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে কমিটির আহ্বায়ক আর সদস্য সচিব দুজনকেই শুধু ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে।
আমি আগে চাকরি করতাম। এখন করি না। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এখনো তার সব তথ্য আছে। চাকরি না করার পর এখনো ওয়েবসাইটে তথ্য আছে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওয়েবসাইট এখনো আপডেট করা হয়নি তাই হয়তো আছে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান অংশের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করেছে। অনেকে এই বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ক্ষোভ জানিয়ে তারা বলেন, আমরা আর কোনো আদু ভাইয়ের নেতৃত্ব দেখতে চাই না। যারা সক্রিয় শিক্ষার্থী তারাই যেন সামনে দায়িত্বে আসে। এতে তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
রংপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি এবং জেলা কমিটির নেতা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে রাজনীতি করে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
জিওগ্রাফি বিভাগের ছাত্রদলের নির্যাতিত কর্মী মো. রাইহান কবির আবির বলেন, বেরোবি ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করা এবং দ্রুত কমিটি করা প্রয়োজন। আমি ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার, আমাকে হলে নিয়ে মারা হয়েছিল, সে সময় আহ্বায়ক কমিটির কাউকেই ক্যাম্পাসেই দেখিনি। এছাড়া দলীয় লংমার্চ, মহাসমাবেশে আমি আমার নেতৃত্বে অনেক প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকেছি, তখনও এই কমিটির কেউ ছিল না। মূলত, ১১ সদস্যের কমিটির কেউই কমিটি হওয়ার পর থেকে ছিল না, আহ্বায়ক রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্য সচিব চাকরিজীবী হওয়ায় ৫ আগস্টের পর দুজনের মাধ্যমে নামমাত্র কিছু প্রোগ্রাম হয়।
আরও পড়ুন
- ছাত্রদল নেতার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি, মহিলা দল নেত্রীকে অব্যাহতি
- বন্ধ ক্যাম্পাসে অসহায় প্রাণিদের খাবার দিচ্ছে ছাত্রদল
রাইহান কবির আরও বলেন, নিষ্ক্রিয় থাকা এবং নেতৃত্বের অযোগ্যতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে, সংগঠনে ছাত্রলীগের কর্মীদের পুনর্বাসনের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করতে, সংগঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মদক্ষতা যোগ করতে দ্রুত যোগ্যদের দিয়ে নতুন কমিটি করার বিকল্প নেই। আমরা ছাত্রদলের একটা পরিচয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে চাই, তাই দ্রুত নতুন কমিটি হওয়া প্রয়োজন।
নিষ্ক্রিয় থাকা এবং নেতৃত্বের অযোগ্যতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে, সংগঠনে ছাত্রলীগের কর্মীদের পুনর্বাসনের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করতে, সংগঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মদক্ষতা যোগ করতে দ্রুত যোগ্যদের দিয়ে নতুন কমিটি করার বিকল্প নেই। আমরা ছাত্রদলের একটা পরিচয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে চাই, তাই দ্রুত নতুন কমিটি হওয়া প্রয়োজন।
বেরোবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল-আমিন ইসলাম বলেন, বিভিন্ন আইডি ও ফেসবুক পেজে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, আমি দুই পদে আছি। আর সদস্য সচিব (রাশেদ মন্ডল) সে সরকারি চাকরি করে না। সে চুক্তিভিত্তিক প্রজেক্টে চাকরি করে। এখন করে কি না জানি না।
আরও পড়ুন
- ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন, নেতৃত্বে অছাত্ররা
- সারজিস নাগরিক পার্টি করতে পারলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না
বেরোবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাশেদ মন্ডল সরকারি চাকরি করে কি না এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের (রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে) ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাশেদ আমাদের এখানে স্থায়ীভাবে চাকরি করেনি। যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ। আমি এ বিষয়ে ওর (রাশেদ) সঙ্গে কথা বলবো।
এ বিষয়ে বেরোবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাশেদ মন্ডলের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আগে চাকরি করতাম। এখন করি না। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এখনো তার সব তথ্য আছে। চাকরি না করার পর এখনো ওয়েবসাইটে তথ্য আছে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওয়েবসাইট এখনো আপডেট করা হয়নি তাই হয়তো আছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে মিডিয়ার সামনে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না। এরই মধ্যে আমরা রানিং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেব।
ফারহান সাদিক সাজু/এসএইচএস/জেআইএম