১৫৬ শিক্ষক দিয়ে চলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পাঠদানে ব্যাঘাত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ১০ হাজার ৯৯ শিক্ষার্থী থাকলেও এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক রয়েছেন ২১০ জন। এরমধ্যে ছুটিতে রয়েছেন ৫৪ জন। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতি ৬৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্যে একজন শিক্ষক থাকার কথা। ফলে চরম শিক্ষক সংকটের কারণে উপ উপাচার্যকেও নিয়মিত পাঠদান করাতে দেখা যায়।

এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ বিভাগে বেড়েছে সেশনজট। এতে করে শিক্ষার গুণগতমান ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে উঠা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ৭৫ শ্রেণিকক্ষের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৩৬টি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে অনেক সময় খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানোগ্রামভুক্ত শিক্ষকদের পদের সংখ্যা ৪৫৩টি। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ছাড়করা পদের সংখ্যা ২৬৬টি। তার বিপরীতে কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ২১০ জন। এরমধ্যে ৫৪ শিক্ষক উচ্চতর ডিগ্রির জন্য দেশের বাইরে থাকায় মাত্র ১৫৬ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে ২৫টি বিভাগের পাঠদান। এছাড়া অর্গানোগ্রামভুক্ত অধ্যাপক পদের সংখ্যা ৪৯টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র একজন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ না হলেও প্রতিবছর আসছে নতুন নতুন ব্যাচ। এতে শিক্ষক সংকট প্রকট হচ্ছে। একজন শিক্ষককে একটা সেমিস্টারে গড়ে আটটিরও অধিক কোর্সের ক্লাস নিতে হয়। এর মধ্যে গবেষণার শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের আলাদাভাবে সময় দিতে হয়। একজন শিক্ষকের পক্ষে এতগুলো ক্লাস নেওয়া, খাতা মূল্যায়ন করা আবার নিজে বাসায় গিয়ে পড়াশোনা করা- রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

সবচেয়ে করুণ অবস্থা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের। বিভাগটি ২০১৮ সালে চালু হয়েছে, ছয়টি ব্যাচ চলমান। ইউজিসির ওয়ার্ক ক্যালকুলেশন নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগটিতে ১০ জনের অধিক শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এরমধ্য দুজন শিক্ষক ছুটিতে থাকায় মাত্র তিনজন শিক্ষককে দিয়ে ১৪৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এতে সেশনজটের ঝুঁকি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ২৪টি বিভাগের।

গণিত বিভাগে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান দিচ্ছেন সাতজন শিক্ষক, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে ৩৫৯ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছে পাঁচজন। লোকপ্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগে প্রায় ৪২২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন সাতজন এবং মার্কেটিং বিভাগে ছয় শিক্ষক দিয়ে ৫৫৮ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা জানান, অধিকাংশ বিভাগে বর্তমানে সাতটি ব্যাচ আছে। এর বিপরীতে পাঠদান করান গড়ে পাঁচজন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় সেশনজট বাড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় পড়াশোনার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কিছু শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে গবেষণা করেন। গবেষণা খাতে বরাদ্দও অপ্রতুল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নাবিলা জান্নাত বলেন, বিভাগের পাঁচটি ব্যাচে ৪৫০ শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ একটি শ্রেণিকক্ষ। আরেকটি কক্ষ দুটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌথভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেটি ওই বিভাগের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। যখন আমরা ওই কক্ষে ক্লাস করতে যাই তখন দেখা যায়। সেখানে অন্যদের পাঠদান চলছে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এছাড়া কক্ষসংকটে আমাদের ক্লাস কম হয়। এতে সিলেবাস এগোয় না। এর মধ্যে আমরা এক বছরের সেশনজটের কবলে পড়ে গেছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি বলেন, শিক্ষকের সংকট থাকায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। সময় পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ক্লাস নিচ্ছি। শিক্ষকদের একটা নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াটা এগিয়ে নিতে পারলে সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য দেশের বাইরে থাকা ৫৪ জন শিক্ষক পর্যায়ক্রমে ক্লাসে ফিরবেন। তখন শিক্ষক সংকট কেটে যাবে। একই সঙ্গে শিক্ষায় গতি ফিরবে।

বিজ্ঞাপন

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোনো কাজই হয়নি। কয়েকমাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এসেই দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ ও আবাসনসহ নানা সংকট। এসব সংকট মোকাবিলায় প্রকল্প অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রকল্প অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকট সমাধান হবে।

শাওন খান/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।