মুক্তিযুদ্ধে দত্তক দেয়া যুদ্ধশিশুরা বাংলাদেশে আসুক : মনোয়ারা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পূর্তির সময়টিতে জন্ম সনদ নিতে এদেশে এসেছিলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী যুদ্ধ শিশু মনোয়ারা বেগম ক্লার্ক। জন্মের পর তাকে কানাডায় দত্তক হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন এক কানাডীয় দম্পতি।
বিদেশে অন্য একটি পরিবার ও সংস্কৃতির মাঝে বড় হওয়ার পরও স্বাধীনতার এত বছর পর বাংলাদেশে এসে তার জন্ম সনদ নেয়ার অনুভূতি জানাতে মনোয়ারা ক্লার্ক বলেন, আমি এখানে এসেছি আমার শিকড় খুঁজতে। কেন আমার গায়ের রং বাদামী তা জানতে। এই অনুভূতি একেবারেই একটি স্বপ্নের মত।
বিদেশে ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠলেও তিনি বরাবরই জানতেন তার অতীত। কেননা শৈশবেই মনোয়ারা ক্লার্ককে বলা হয়েছিল যে, তিনি একটি দত্তক শিশু।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে মনোয়ারা ক্লার্কের মতো যেসব ওয়ার চাইল্ড বা যুদ্ধ শিশুকে পাওয়া গিয়েছিল, ১৯৭২ সালে তাদের অনেককে বিদেশে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ধর্ষণের বিভীষিকা যারা সয়েছেন, সেসব নারীর সংখ্যা দুই থেকে চার লক্ষ বলে অনুমান করা গেলেও ওয়ার চাইল্ড বা যুদ্ধ শিশুদের সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টি মফিদুল হক।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতিতা নারী এবং তাদের গর্ভে জন্ম নেয়া যুদ্ধ শিশুদের মেনে নেয়ার সামাজিক মানসিকতা না থাকার কারণেই যুদ্ধ শিশুদের এদেশে না রেখে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে মনে করেন, বীরাঙ্গনাদের নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাদের একজন লেখক সেলিনা হোসেন।
তবে যুদ্ধ শিশুদেরকে দত্তক দেয়ার ব্যাপারটি মানবতার বন্ধনের বহি:প্রকাশ হিসেবেই দেখা উচিত বলে মত দেন মফিদুল হক।
স্বাধীনতার এত বছর পর, আত্মপরিচয় খুঁজতে বাংলাদেশে এসে বাংলা বলতে না পারা মনোয়ারা ক্লার্ক বলছিলেন, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে চান। আর সেজন্য তিনি চান, তার মত সব যুদ্ধ শিশুরাই যেন এদেশে এসে আরও শেখার সুযোগ পায়। -বিবিসি