ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে লাউচাপড়া
প্রকৃতির নিপুণ হাতে সাজানো লাউচাপড়ার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করে আসছে বছরের পর বছর। প্রকৃতির আলো-বাতাস আর অপরূপ সৌন্দর্য মুহূর্তেই সকল গ্লানি মুছে দিয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের মনে বইয়ে আনে আনন্দের ঢেউ। নগরীর কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির নৈসর্গিক ছোয়া পেতে প্রতি বছরই লাখ লাখ পর্যটকরা ছুটে যান দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঘন সবুজ আর পাহাড়কে যারা ভালোবাসেন তারা চলে আসতে পারেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের লাউচাপড়া পিকনিক স্পটে।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছবির মতো গারো পাহাড় দিয়ে ভারতের তুরা জেলাকে আলাদা করে রেখেছে বকশীগঞ্জ উপজেলা। ঘন সবুজ পাহাড়, বনভূমি সব সময় আকৃষ্ট করেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় ঝরণা ধারা, আদিবাসীদের পাহাড়ি গুচ্ছগ্রাম আর দিগন্ত জোড়া ঘন সবুজ সব মিলিয়ে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ সমারোহ।
জামালপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ অংশে বিশাল গারো পাহাড়। লাউচাপড়া ও ডুমুরতলা মৌজায় বিভক্ত পাহাড় আর বনভূমি এলাকাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। মৌজা দুটির পাহাড়ের ঢাল দিয়ে অবস্থিত লাউচাপড়া, পলাশতলা, দিঘলাকোনা, বাবলাকোনা, বালিজোড়া, গারোপাড়া, শুকনাথপাড়া, সোমনাথপাড়া, মেঘাদল, সাতানীপাড়া, বালুঝুড়ি গ্রামে গারো ছাড়াও রয়েছে হাজং, কোচদের বাস। এই অঞ্চলে আদিবাসী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭০০।
প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি আদিবাসী গ্রামগুলো। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন এক নজর দেখতে এখানে ছুটে আসে ভ্রমণ প্রিয়াসীরা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করতে প্রতি বছরেই শীত মৌসুমে ভিড় করে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভ্রমণ পিপাসুদের সরগমে পুরো শীত মৌসুম লাউচাপড়া হয়ে উঠে পিকনিক স্পট। আদিবাসীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর ছোট-বড় অস্থায়ী দোকান স্থান পায় পিকনিক স্পটে। পুরো শীত মৌসুম জুড়ে আদিবাসীদের মাঝে লক্ষ্য করা যায় উৎসবের আমেজ। এ সময় নির্জন নিভূত পাহাড়ি এই অঞ্চলটি অসংখ্য মানুষের পদভারে হয়ে উঠে মুখরিত।
১৯৯৬ সালে ভ্রমণ পিপাসুদের কথা চিন্তা করে জামালপুর জেলা পরিষদ ২৬ একর জায়গা নিয়ে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষণিকা নামে নির্মাণ করে পিকনিক স্পট। ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের আবাস নিশ্চিত করতে এই পিকনিক স্পটের পাশেই ব্যক্তি মালিকানায় বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল টুরিস্ট কমপ্লেক্স `বনফুল`। ১৫০ ফুট উচ্চতায় `ক্ষনিকা` পিকনিক স্পটেই ৬০ ফুট সু-উচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
সুউচ্চ এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ঘন সবুজের সমারোহ নিয়ে সারি সারি পাহাড়ি টিলা। মুহূর্তেই চোখ চলে যাবে সীমান্তের ওপারে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঘন সবুজ পাহাড় ছাড়িয়ে তুরা জেলার পাহাড়ি থানা শহর মহেন্দ্রগঞ্জের দিকে। সু-উচ্চ এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট টাওয়ার।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লাউচাপড়া একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। সরকারি ভাবে আরো উদ্যোগ নেয়া গেলে লাউচাপড়া হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি।
এআরএ/এবিএস