কুমারী মা ও সন্তান কোথায় যাবে?


প্রকাশিত: ০২:২২ এএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কোনও অবিবাহিত মেয়ে যদি সন্তানের জন্ম দেন তাহলে তার এবং তার সেই সন্তানের আশ্রয় কোথায় হবে- বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া অত্যন্ত জটিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই প্রশ্নকে জোরালো করে তুলেছে। গত সোমবার ঢাকায় এক কুমারী মাতা তার নবজাতককে ছয় তলা ভবনের উপর থেকে ছুড়ে ফেলবার ঘটনার পর প্রসঙ্গটি সামনে চলে এসেছে। যদিও ভাগ্যক্রমে ওই শিশুটি বেঁচে গেছে। এর আগেও গত বছর একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। বস্তায় মোড়া একটি শিশুকে একটি ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটিকে কুকুর কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছিল। ওই শিশুটির মা কিংবা বাবার খোঁজ আজও মেলেনি।

প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক একজন মা কোন পরিস্থিতিতে তার গর্ভজাত সন্তানকে ফেলে দেন বা হত্যা করতে উদ্ধ্যত হন। আমাদের সমাজে এমনিতেই নির্যাতিতা নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েও উল্টো নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতনের শিকার নারীকেই দায়ী করা হয়। সেক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার কোনো নারী যদি সন্তান জন্ম দেন সেটি তার জন্য জীবন-মরণ প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। সেই নারী বা মা লোকলজ্জার ভয়ে অস্বীকার করতে বাধ্য হন মাতৃত্বের সহজাত প্রবণতাকে।

আলোচ্য নারীটি তার আত্মীয়ের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিল। এরফলে যে সন্তানের জন্ম হয় তার দায়িত্ব নেওয়ার আসলে কেউ থাকে না। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, ধর্ষণের ফলে যদি কারো কোনও সন্তান হয়ে থাকে তাহলে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রই নেবে। সেটাও এক দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। সত্যি বলতে ভুক্তভোগীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এ ধরনের পরিবেশ এখনো বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি। তাই তো শিশু হত্যার মতো এ ধরনের মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটছে।

একজন কুমারী মাতা তার সন্তানের চেয়ে সমাজে টিকে থাকার প্রশ্নে তার নিজের জীবন নিয়েই ভাবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি সভ্য সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে ভুক্তভোগী নয় অপরাধীকেই শাস্তির আওতায় নিতে হবে। পাল্টাতে হবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। এরসঙ্গে রাষ্ট্রকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুধু আইন থাকলেই হবে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগও দেখতে চায় মানুষ। তবেই সামাজিক এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।