মোর বাবার হাতটা ভালো না হইলে কায় করি খাওয়াইবে


প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ম তলার ১৮ নম্বর শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ছেলের মাথার পাশে বসে কাঁদছিলেন মির্জা বেগম। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে সজোরে কেঁদে ওঠেন তিনি।

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠেন ‘মোর বাবার হাত ভালো না হইলে মোক কায় করি খাওয়াইবে।

কিভাবে হাত পুড়লো ? জানতে চাইলে মির্জা বেগম (৪৫) জানান, তার একমাত্র ছেলে জুয়েল লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার জামির বাড়ি এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করতো। প্রায় ৭/৮ মাস আগে খেলার ফাঁকে মাদরাসার পাশে চৌধুরীর হাটের এক চায়ের দোকানে পানি খেতে যায় জুয়েল। টিউবওয়েল ঠেসে পানি তুলতে গিয়ে হাত পিছলে চায়ের দোকানের জ্বলন্ত চুলায় বাম হাত পড়ে যায়। আর এতে পুড়ে যায় পুরো হাতটি। স্বামীহারা মা মির্জা বেগম (৪৫) একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন।

স্থানীয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান ছেলেকে। শুরু হয় চিকিৎসা। দীর্ঘ ৪০ দিন চিকিৎসা শেষে জুয়েলকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন মির্জা বেগম। ছেলের হাত ভালো হবে-এই আশায় মির্জা বেগমের দিন কাটলেও ভুল চিকিৎসায় এর বিপত্তি ঘটতে থাকে। দিনে দিনে হাত ফুলে যায়। ব্যাথায় ছটপট করে কাতরাতে থাকে জুয়েল। অসহায় মা মির্জা বেগমের আর কিছুই করার থাকে না। এভাবেই চলে যায় আরো কিছুদিন। এরই মধ্যে জামিরবাড়ি এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়াজুর রহমান বাদলের নজরে আসে বিষয়টি।

তাৎক্ষণিক তার প্রচেষ্টা ও আর্থিক সহায়তায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় জুয়েলকে। এরপর গত ১৯ ও ২৬ জানুয়ারি দুই দফায় জুয়েলের হাতে অপারেশন করেন চিকিৎসক।

Rangpur

এদিকে, জুয়েলের বর্তমান শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলেও শঙ্কা কাটছে না মির্জা বেগমের।

মির্জা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় কুঁড়ি বছর আগে প্রথম স্বামীর সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে চিরতরে হারান। জুয়া আর নেশায় আশক্ত স্বামী আবার দ্বিতীয় বিয়ে করলে তাকে ছেড়ে এক নিকটাত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর বিয়ে করেন ওই এলাকার আশকর আলী নামে এক দিনমজুরকে। সেই ঘরে জন্ম নেয় জুয়েল। গত রমজান মাসে আশকর আলীও মারা যান। বেঁচে থকার একমাত্র অবলম্বন এখন ছেলে জুয়েল। ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় মাথাগোঁজার ঠাঁই নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। নিজ খরচে লেখাপড়া করানোর সাধ্য না থাকায় ছেলেকে রাখেন এতিম খানায়। ছেলে বড় হবে, পড়ালেখা শিখে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন হবে এই আশায় দিন কাটলেও পঙ্গুত্বের আশঙ্কায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মির্জা বেগম।

মাদরাসার সভাপতি ওয়াজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সহায় সম্বলহীন বিধবা মির্জা বেগমের পাশে দাঁড়ানোর মতো আপনজন বলতে কেউ নেই। বিষয়টি জানার পর নিজ উদ্যোগে ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে ছেলিটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত শঙ্কা কেটে গেছে। আগে ঠিকমত চিকিৎসা না হওয়ায় হাতটি নষ্ট হতে ধরেছিল। আরও এক বার অপারেশন করতে হবে। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সে হাতের শক্তি ফিরে পাবে বলেও জানান তিনি।

জিতু কবীর/ এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।