ভালো নেই মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা
মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীদের অনেকেই ভালো নেই। অভাব, পুলিশের ভয় আর অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকে চাকরি করলেও পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরী। ফলে অবৈধভাবে বিপদ সংকুল পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও মিলছেনা সুখের দেখা।
রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও মালয়েশিয়ার ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, কোতাবারু, পেনাং, জহুরবারু, ইপো, পেটালিং জায়া, শাহালম, মালাক্কা সিটিতে কর্মরত শ্রকিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের ভয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড় ও জঙ্গলে। শুধুমাত্র ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের পাহাড় আর জঙ্গলে পালিয়ে কাজ করছেন এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি। অবৈধ বলে নিয়োগকর্তার সব জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। টু শব্দেরও সুযোগ নেই। কথা বললে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের প্যারেক হিল এলাকায় বাটারফ্লাই গার্ডেনে পাওয়া গেছে ২০ জনের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক। বাগানটিতে কর্মরত শ্রমিকদের একজন বৈধ ছাড়া বাকি সবাই অবৈধ।
তাদের মধ্যে রতন সরকার নামের এক শ্রমিক জাগো নিউজকে জানান, ২০১২ সালে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বৈধ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। কুয়ালালামপুরের চোঙ্গাই বুলু এলাকায় রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন এক বছর। এসময় কম হলেও ১০ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এখানকার পুলিশও দশ বিশ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ঝামেলা এড়াতে রাজধানীর মায়া ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে পাহাড় জঙ্গলের প্রদেশ ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে আসি। এখানে কম বেতনের কাজ করলেও শান্তি ছিলো। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ উত্যপ্ত হয়ে ওঠে ক্যামেরুন হাইল্যান্ড। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় চিরুনী অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। একই বাগানে কাজ করা আমরা ১১ জন টানা চার দিন পাহাড়ের গুহায় পালিয়ে ছিলাম। পরিস্থিতির অবনতি দেখে অনেকেই পাশের প্রদেশে পালিয়ে যায়।
একই এলাকার আরেকটি বড় সবজি বাগানের নাম কামপাং রাজা গার্ডেন। এখানে কাজ করা একমাত্র বাংলাদেশি ম্যানেজার ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এদেশের সরকার বৈধ না করলে ক্যামেরু হাইলান্ডে পালিয়ে কাজ করা বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একদিকে বনে-জঙ্গলে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রপ, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব।
অন্যদিকে, পুলিশের অভিযানে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রাণ যায়যায়। তারপরও প্রতিদিনই বিভিন্ন পথে শত শত বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন।
ফজলুর রহমান বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কয়েক বছর পরপর অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়। এই সুযোগটি নিতে অবৈধরা বেশির ভাগ ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের মতো পাহাড় জঙ্গলে পড়ে থাকে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ফজলু বলেন, হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশির হাতে পাসপোর্ট বা অন্য কোন ট্রাভেল ডুকুমেন্টস নেই। বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে হলে প্রথমেই তাদের পাসপোর্ট লাগবে। পাসপোর্ট পেতে হলে তাদের আসতে হবে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। এমআরপি পেতে হলে স্বশরীরে হাই কমিশনে আসা বাধ্যতামূলক। তবে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে পুলিশের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে হাইকমিশনে আসা ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে মালয়শিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বৈধ অবৈধ বাংলাদেশি যে কোন নাগরিক নিয়মানুযায়ী পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে সাড়ে তিন লাখ অবৈধ বাংলাদেশিকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার সহিদুল ইসলাম বলেন, যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ এক বছরের নিচে এসে গেছে তাদের উচিত আগে ভাগে এমআরপির জন্যে আবেদন করা। কারণ এ ধরনের ঘোষণার পর প্রায়ই হাই কমিশনে চাপ ও জটলা সৃষ্টি হয়।
আরএম/এসকেডি/এএইচ/পিআর