সিঙ্গাপুরের মসজিদে চলতো রাহমানি, সাঈদী ও জাকির নায়েকের ওয়াজ


প্রকাশিত: ০৭:২১ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

জঙ্গি সন্দেহে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এরা মূলত সিঙ্গাপুরের একটি মসজিদে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দীন রাহমানি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী এবং ইসলামিক গবেষক জাকির নায়েকের ওয়াজের সিডি শুনতো। তাদের লেকচার নিয়ে আলোচনা করতো। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব তথ্য পেয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ‘জঙ্গিরা’ সিঙ্গাপুরের মোস্তফা মার্কেটের পাশে এ্যাঙ্গুলিয়া নামের একটি মসজিদে প্রতি রোববার মাগরিবের নামাযের পর সমবেত হয়ে ওয়াজ শুনতো। সেই মসজিদে বসেই তারা সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে জিহাদি ভিডিও দেখত। স্থানীয় আমিনুর, নুরুল হক এবং আশরাফ প্রায়ই সেই মসজিদে বয়ান করতো।

এর আগে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ২৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর। এদের মধ্যে ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

সূত্র আরো জানায়, অভিযুক্তরা গত ২ থেকে ৮ বছর মেয়াদে সিঙ্গাপুরে শ্রমিকের কাজ করতো। তারা জসীমউদ্দীন রাহমানিয়া, আবুল কালাম এবং ড. জাকির নায়েকের ওয়াজ শুনে আহলে হাদিসের অনুসারী হন। মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা ইত্যাদির কথা বলে তারা প্রত্যেকের কাছে ১০ থেকে ২০ ডলার করে সিঙ্গাপুরী ডলার চাঁদা আদায় করতো। এই টাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে জিহাদী বিষয়ক বই পাঠাতো।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘জঙ্গিরা’ একে অন্যের সঙ্গে মোবাইলে ইসলামী গবেষক মুফতি আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী, আমানুল্লাহ বিন ইসমাইলের ওয়াজের অডিও ফাইল শেয়ার করে শুনতো।

এক প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) কিংবা আল-কায়েদার সঙ্গে এরা জড়িত রয়েছে। তবে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রাহমানিয়ার অনুসারী। তদন্তে আইএস কিংবা আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১৪ জন আসামি হচ্ছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. জাফর ইকবাল, কুমিল্লার গোলাম জিলানী, মো. নুরুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, টাঙ্গাইলের মো. আমিনুর, আব্দুল আলীম, মো. শাহ আলম, ঝিনাইদহের আকরাম হোসেন, কুড়িগ্রামের আলম মাহাবুব, চুয়াডাঙ্গার আবদুল আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পারভেজ ডলার, মুন্সিগঞ্জের মো. জসিম, পাবনার মো. আশরাফুল ও ঢাকার মো. সাইফুল ইসলাম। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যাচাই বাছাই চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারো রিমান্ড চাওয়া হতে পারে।’

এ ঘটনার বাকি ১২ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি। তবে তাদেরকেও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

এআর/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।