সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি টাকা লুট : সেই সোহেলের ৫ বছর জেল
কিশোরগঞ্জে সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংকের ভোল্ট থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় প্রধান আসামি সোহেল রানাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৫ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম। মামলার অভিযোগ গঠনের দিন সোহেল রানা অভিযোগ স্বীকার করায় তাকে এ দণ্ড দেন আদালত। এ মামলার অপর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করেন আদালত।
২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ভোল্ট থেকে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা লুট হয়। ওই দিন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বেলা আড়াইটার দিকে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ প্রধান শাখার ভল্ট থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটের বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই শাখার দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা ভল্টের দুটি কক্ষের ভেতরেরটিতে টেবিলের উপর রক্ষিত টাকা দেখতে না পেয়ে এবং কক্ষের মেঝেতে গর্ত দেখতে পেয়ে টাকা লুট হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। ভল্টরুম থেকে পাশের একটি বাড়িতে সোহেলের ভাড়া কক্ষ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কক্ষে এ টাকা লুট করা হয়।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ডিজিএম শেখ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি মামলা (নং-৩২) দায়ের করেন। ৪৬১ ও ৩৮০ দণ্ডবিধিতে দায়ের করা এ মামলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. আবদুল মালেককে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ২৮ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে সোহেল ও তার ছোট ভাই ইদ্রিছকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তন্ময় ভিলা নামে ওই বাড়ির ৬ তলায় লুট করা টাকা রেখেছিল সোহেল। লুট করা ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বস্তাভর্তি ১৬ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওইদিনই গ্রেফতারকৃত ইউসুফ মুন্সী ওরফে হাবীব ওরফে সোহেল ও তার ছোট ভাই ইদ্রিছ মুন্সীকে কিশোরগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন ২৯ জানুয়ারি এ দু’জনকে আদালতে হাজির করে ১০দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত উভয়ের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সোহেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি তার ভাড়া নেয়া রাজধানীর কদমতলীর মদিনা মসজিদ সংলগ্ন অপর একটি ৬ তলা বাসা থেকে উদ্ধার হয় আরো আড়াই লাখ টাকা। এছাড়া ওইদিন বিকেলে পুলিশের হাতে আটক হয় সোহেলের কিশোরগঞ্জের স্ত্রী মাহিলা আক্তার হিমা। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের এমএলএসএস আবুবকর সিদ্দিকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর তাকেও পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
অন্যদিকে ব্যাংক থেকে লুট করা টাকা ৫টি বস্তায় ভরে ২৩০ বস্তা চালের নিচে লুকিয়ে যে ট্রাকে করে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার শ্যামপুরে গিয়েছিল সেই ট্রাক এবং ২২২ বস্তা চাল যে কাভার্ড ভ্যানে করে সোহেল রাজধানীর শ্যামপুর থেকে আটরশির দরবার শরীফে পাঠিয়েছিল সেই কাভার্ড ভ্যান দু’টিকেই আটক করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মো. আমানুল্লাহ শেখ বাদী হয়ে ২৯ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক এএসপি রাজীব কুমার দেব আলোচিত এ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন সদর মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মালেক
দীর্ঘ তদন্ত শেষে র্যাব-১৪ এর এএসপি রাজিব কুমার দেব আসামি সোহেল রানা ওরফে মো. হাবিব ওরফে ইউসুফ মুন্সী, ইদ্রিছ মুন্সী, সোহেলের বান্ধবী মাহিলা আক্তার হীমা ও সিরাজ উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি রামেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার ও সোনালী ব্যাংক নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন এবিএম লুৎফর রাশিদ রানা।
নূর মোহাম্মদ/এমএএস/আরআইপি