টেলিযোগাযোগে এশিয়া-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তৃতীয়


প্রকাশিত: ০৪:৫২ এএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ২০টি দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বাজার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ তৃতীয় সেরা স্থানে রয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের জিএসএমএ-এর ‘মোবাইল ইকোনমি ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামে এক বিশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। এরপর মোট ২০টি দেশের তালিকায় ধারাবাহিকভাবে রয়েছে ২. পাকিস্তান ৩. বাংলাদেশ ৪. মালয়েশিয়া ৫. ইন্দোনেশিয়া ৬. থাইল্যান্ড ৭. তাইওয়ান ৮. নেপাল ৯. কম্বোডিয়া ১০. ভিয়েতনাম ১১. হংকং ১২. শ্রীলঙ্কা ১৩. জাপান ১৪. ফিলিপাইন ১৫. সিঙ্গাপুর ১৬. চীন ১৭. মিয়ানমার ১৮. অস্ট্রেলিয়া ১৯. দক্ষিণ কোরিয়া ২০. নিউজিল্যান্ড।

এ গবেষণা প্রতিবেদনে বাজার প্রতিযোগিতার তীব্রতা ও মান নির্ধারণে হারফিন্ডাল হার্শম্যান বা এইচএইচআই সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। একটি বাজারে প্রতিযোগিতা কেমন হবে এইচএইচআইয়ের মাধ্যমে সেটি বের করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা দেয়ার জন্য একটি বাজারে কতটি প্রতিষ্ঠান আছে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বাজার দখলের শতাংশকে বর্গ করে এইচএইচআই সূচক নির্ধারণ করা হয়। এ সূচকের সর্বোচ্চ মান ০ এবং সর্বোচ্চ মান ১০ হাজার। এইচএইচআই সূচকে একটি বাজারের স্কোর ১৫ শত থেকে ২ হাজার পয়েন্টের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজার মনে করা হয়। বাজারের স্কোর ২ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে থাকলে সেটিকে প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়। যে বাজারের সূচক ১০ হাজারের যত কাছাকাছি, সেটিকে ততটাই একপেশে বাজার ধরা হয়।

এইচএইচআই সূচক অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের স্কোর ২ হাজার ৯৩২। জিএসএমএর তালিকাভুক্ত ৬ মোবাইল অপারেটর ও ২টি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বাজার দখলের ভিত্তিতে এ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬টি মোবাইল অপারেটর আছে। এগুলোর মধ্যে ৪২ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে শীর্ষে আছে গ্রামীণফোন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলালিংকের বাজার দখল ২৫ শতাংশ, তৃতীয় রবি আজিয়াটার বাজার দখল ২২ শতাংশ, চতুর্থ এয়ারটেলের বাজার দখল ৭ শতাংশ, টেলিটকের ৩ শতাংশ এবং সিটিসেলের ১ শতাংশ বাজার দখল রয়েছে। বাজার দখলের এ হিসাব গ্রাহকসংখ্যা ও আয়ের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। গ্রাহকসংখ্যায় তৃতীয় হলেও আয়ের দিকে বাজারে রবি দ্বিতীয়, বাংলালিংক তৃতীয়। রবি-এয়ারটেল একীভূত হলে মোবাইল অপারেটরের সংখ্যা পাঁচে নেমে আসবে। এ সূচকে বাজার প্রতিযোগিতার এশিয়া-প্যাসিফিকের সেরা দেশ ভারত, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান। ভারতের এইচএইচআর স্কোর ১ হাজার ৪০০, আর পাকিস্তানের স্কোর ১ হাজার ৮০০-এর বেশি।

এদিকে গত ডিসেম্বরে ‘এশিয়ায় ডিজিটাল সমাজ নির্মাণ’ শীর্ষক জিএসএমএ-এর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের মোট জিডিপি বা দেশজ উৎপাদনে ক্রমেই বাড়ছে মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থনীতির অবদান। জিএসএসএম`র তথ্যমতে ২০১৪ সালে দেশের মোট জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশের জোগান এসেছে মোবাইল ফোনভিত্তিক বিভিন্ন সেবা থেকে। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে মোবাইল ফোন অর্থনীতির অবদান বেড়ে হবে কমপক্ষে ৬ শতাংশ।

জিএসএমএর এ গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার জিডিপিতে মোবাইল ফোন অর্থনীতির অবদান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার ও বাজার বৃদ্ধিকে এসব দেশের জিডিপিতে মোবাইল ফোন অর্থনীতির জোগান বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে এ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে হারে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালে দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষের হাতে স্মার্টফোন থাকবে।

স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল ডিভাইসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের গুরুত্বের বিষয়টিতেও জোর দেয়া হয়েছে গবেষণায়। অর্থ লেনদেন, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, মূল্য পরিশোধের মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়লে তা একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করে জিএসএমএ। জিডিপিতে মোবাইল ফোন অর্থনীতির অবদান বাড়াতে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাবনাও দিয়েছে জিএসএমএ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের কর হার কমানো, সিম প্রতিস্থাপন করের মতো বিষয়ের দ্রুত সমাধান, মোবাইলভিত্তিক আর্থিক সেবা খাতে ব্যবসায়িক সমতা নিশ্চিত করা, সব মোবাইল অপারেটরের জন্য সমান সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা নেয়া ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে নভেম্বর-২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক রয়েছে ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার, বাংলালিংকের গ্রাহক রয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার, রবির গ্রাহক রয়েছে ২ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার, এয়ারটেলের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৪৫ হাজার, টেলিটকের গ্রাহক রয়েছে ৪০ লাখ ৫৭ হাজার এবং সিটিসেলের গ্রাহক রয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার। জিএসএমএ-এর ‘মোবাইল ইকোনমি ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামের শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেখা যাবে goo.gl/eA1T3E এই ঠিকানায়।

আরএম/জেডএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।