অযত্নে মুছে যাচ্ছে পল্লী কবির স্মৃতিচিহ্ন
ওইখানে তোর দাদির কবর, ডালিম গাছের তলে। তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে বা তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে/গাছের ছায়া লতায় পাতায় উদাসী বনের বায় কিংবা বাবু সেলাম বারে বার, আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ি পদ্মার পাড়- এমন শত কবিতা, গল্প, নাটক আর গানের মাধ্যমে পল্লী মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরে যে কবি পেয়েছিলেন পল্লী কবির উপাধী। সেই পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী ১ জানুয়ারি শুক্রবার।
এদিকে, জসীম সংগ্রহশালাটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পরেও সংগ্রহশালাটি চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা। ধ্বংসের মুখে কবির বাড়ি ও সংগ্রহশালাটি। ধূলা-বালি পরে নষ্ট হচ্ছে কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র। অনেক ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ লোক কবির জীবনদশায় ছবি তুলেছিলেন। আজ সেই স্মৃতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কবির ব্যবহৃত টাইপ রাইটার, কলের গান বা গ্রামোফোন ধূলা ও জং ধরে নষ্ট হওয়ার পথে।
কবি ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের ছায়াঢাকা পাখি ডাকা নিঝুম পাড়া গাঁ তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতার নাম আনছার উদ্দীন, মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৩৯ সালে মমতাজ বেগমকে বিবাহ করেন। কবির চার ছেলে দুই মেয়ে তারা সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য।
কবির ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় তৎকালীন কলোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে ২১শে পদকে ভূষিত হন পল্লী কবি জসীম উদ্দীন।
সারা বছরই কবির নিবাস মুখরিত থাকে দূর-দূরান্ত থেকে আগত কবির অনুসারী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায়। কিন্তু কবির বাড়িতে কিছু ছবি আর পুরোনো ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। কবির ইতিহাস সম্পর্কে জানার কোনো লাইব্রেরি ও গবেষণাগার না থাকায় নিরাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এখানে বিশ্রাম বা খাওয়া দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের।
২০১১ সালে সরকার জসীমস্মৃতি সংগ্রহশালা নামে একটি মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালের শেষ দিকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখানে গবেষণািগার, গ্যালারি, লাইব্রেরি, গেস্ট হাউস ও উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শুধুমাত্র কবি পরিবারের সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে সংগ্রহশালাটি চালু কারা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন জসীম ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। ফলে নষ্ট হতে বসেছে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জসীমস্মৃতি সংগ্রহশালাটি।
সংগ্রহশালার চত্বরটি এখন কাশবন আর জঙ্গলে ভোরে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শেওলা পরে নষ্ট হতে চলেছে ভবনগুলো। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সংগ্রহশালাটি উদ্বোধনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা। তাদের দাবি দ্রুত যেন জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় সংগ্রহশালাটি।
অন্যদিকে, জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবির জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শহরতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক কবরস্থানের কবি মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও আয়োজন করা হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী জসীম পল্লী মেলার। আর এ আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরে সোরে। মেলা শুরু হবে ১০ জানুয়ারি। আর তা চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. সরদার সরাফত আলী জাগো নিউজকে জানান, জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। পরে মাজার প্রাঙ্গনে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জসীম পল্লী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এআরএ/পিআর