‘ইবার বোট দিয়া খুব মজা পাইছি’


প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

‘খুব সুন্দরবাবে বোট দিছি। মেলা দিন পরে ইবার সুস্ত মতন বোট দিছি, কেউরি বাদা দেয় নাই। নিজের বোটটা নিজেই দিছি। ইবার বোট দিয়া খুব মজা পাইছি।’ বুধবার শেরপুরের নবীনগর আদর্শ বিদ্যাপীঠ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হওয়ার পথে গৃহবধু আছমা বেগম (২৮) এসব কথা বলেন।

তার মতো একই কথা বলেন আরেক ভোটার সখিনা বেগম (৩৮)। তিনি বলেন, “সুষ্টু নির্বাচন অইছে, আমরা শান্তি মতন বোট দিছি। ইবার কোন গ্যাঞ্জাম অয় নাই। নিজের পছন্দের মার্কায় বোট দিয়া খুব আরাম পাইছি।”

বুধবার সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষারত নারীদের দীর্ঘ লাইন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রটি কেবলমাত্র নারীদের। ৮টি বুথে তখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে নয়শ ভোট পড়েছে। সেখানে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৫৪২।

তিনি জানান, সকাল থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে থাকে। এখানে ভোট পড়ার হার খুব ভালো।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদুল হক রুবেল ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাড. আব্দুল মান্নান বলেন, কেন্দ্রগুলো ঘুরে যা দেখেছি, তাতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে বলে মনে হয়েছে।

এর আগে বেলা ১১ টার দিকে শহরের নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরষ ভোটারদের সারিবদ্ধ লাইন। কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থায়।

ধানের শীষ এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সহ-সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কেমন ভোট হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, খুব সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। সারাটা দিন এভাবে গেলেই হয়। যার ভোট সে দিচ্ছে, আমাদের তাতে কোন কথা নাই।
Sherpur
ভোট দিয়ে বের হওয়ার পথে তোফাজ্জল মিয়া (৫৬) নামে এক ভোটার বলেন, “ইবার খুব সুষ্ঠু বোট অইতাছে। এক্কেবারে নিরপক্ষবাবে যার বোট, অই দিবার পাইতাছে। বোডে কোনো কারচুপি নাই। কোনো গ্যাঞ্জাম নাই।”

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর পৌরসভার ৩৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। একই চিত্র ছিল নালিতাবাড়ী, নকলা ও শ্রীবরদী পৌরসভায়ও। জেলার চারটি পৌরসভার ৬৪টি কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীবরদী পৌরসভার এপিপিআই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে ১২টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ফকির মাহমুদ (৬৫) ও আজিজল হক (৪৫) সহ ৫ জন আহত হয়। আহতরা শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। পরে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নালিতাবাড়ী পৌরসভার তারাগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুজ্জামান কামু ও সুরঞ্জিত সরকার বাবলুর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবি ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই কেন্দ্রে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতি শান্ত হলে ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

এদিকে নকলা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মাওরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগে রফিজ উদ্দিন (২২) নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম হায়দার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক ডা. এএম পারভেজ বলেন, খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হতে পারে।

হাকিম বাবুল/এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।