পৌর নির্বাচন : কেন্দ্র পাহারা দিতে রিজভীর আহ্বান


প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলো পাহারা দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনের ঐতিহ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে উৎখাত আর দলটির তাৎপর্য হচ্ছে রাজনীতি ও রক্তপাতের মধ্যে পরস্পর নির্ভরতা সৃষ্টি। এরা শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতি চায় না। এরা জনগণকে সম্মান দিতেও চায় না। শুধু হুকুম ও বাধ্য করার হুঙ্কার ছেড়ে জনগণকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচন করে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার ও বিরোধী মতের প্রতি জন্মান্ধ বিরোধীতা আওয়ামী লীগের। তাই যেকোনো বিরোধীতা ও সমালোচনা দমন করতে সরকার এখন ফেরাউনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তারা।

নির্বাচন কমিশনকে লক্ষ্য করে রিজভী বলেন, এটি একটি নিষ্ক্রিয় ‘ডাকঘরে’ পরিণত হয়েছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ও নিশ্চুপ থাকে। এই নতজানু ভূমিকার জন্য ছি ছি করছে মানুষ। কমিশনের এই ভূমিকার কারণেই লক্ষীপুরবাসী তাহের আতঙ্কে ভুগছে। ফেনীর নিজাম হাজারীর লোকেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়ে।

বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে বেশি সুবিধা দিচ্ছে। তার এই বক্তব্যকে বছরের শ্রেষ্ঠ আলোচিত তামাশা ছাড়া মানুষ অন্য কিছু ভাবতে পারছে না। তার এই বক্তব্যে মনে হয়-ধানক্ষেত বা ধানের গোলার নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন হয়ে মুষিক বিলাপ করছে গৃহস্থের কাছে। যদি হানিফ সাহেবের কথা সত্য হয় তাহলে ঢাকা থেকে পৌর নির্বাচনী এলাকায় শাসকদলের প্রার্থীর পক্ষে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পাঠাচ্ছে কারা ? বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মিছিলে ককটেল ও বোমা ফাটাচ্ছে কারা ?

তিনি বলেন,  জামালপুর জেলার মেলান্দহ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিল্লাত এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল গফুরকে গত ২৪ ডিসেম্বর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতরাতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সন্দ্বীপ পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়কারী মনিরুল ইসলামকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে, তার সঙ্গে বিএনপির আরো দুইজন কর্মী হায়দার আলী ও সোহাগকেও কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করা হয়। তারা তিনজনেই এখন স্থানীয় হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

রিজভী আরো বলেন, নেত্রকোনা দূর্গাপুর পৌরসভার প্রার্থীর বড় ভাই জুলহাস খাঁন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পদক সাবু মিয়া, ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আল-আমিন ও ৩ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতিসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়াকে নিজ নির্বাচনী পৌর এলাকায় খাগড়াছড়ি ছাড়তে বারবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন চাপ প্রয়োগ করছে এমনকি এক প্রকার হুমকি প্রদর্শন করছে। তিনি এই এলাকার বিএনপি’র দুইবারের সংসদ সদস্য হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানো এবং ভোটার হিসেবে ভোট প্রদান করা তার সাংবিধানিক অধিকার। এছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে হয়রানি ও হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি ও গ্রেফতারের ভয় দেখানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার আদর্শগ্রাম এলাকায় উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামকে হত্যার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ সম্পূর্ণ নষ্ট এবং জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। নিহত কৃষকদল নেতার স্ত্রীকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন মনগড়া এফআইআর-এ স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার মামলাও দায়ের করতে পারেননি। মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন কর্তৃক আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ করতেও বাধা সৃষ্টি করেছে পুলিশ-প্রশাসন।

রিজভী বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন সরকারি একটি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার ভাই, সেখানে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় বাধা প্রদান ও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্বাচনী প্রচার -প্রচারণা থেকে বিরত থাকার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

হবিগঞ্জে অ্যাডিশনাল এসপি সহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ বিএনপি’র নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দেয়ায় ওই এলাকায় তারা থাকতে পারছেন না। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীর বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং যুবদল নেতা হেলাল আহমেদকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যশোর জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫৬ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৭৭, যশোরে ৫৬ এবং গাইবান্ধায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে নড়াইলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ তালুকদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদ উপস্থিত ছিলেন।

এমএম/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।