বাগেরহাটে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে নারী প্রার্থী


প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

বাগেরহাট পৌরসভার ৫৭ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসিনা রহমান (পাঞ্জাবী প্রতীক) এবং ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নার্গিস আক্তার ইভা (টেবিল ল্যাম্প প্রতীক)।

পৌর নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলরদের পদে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই এই দুই নারী প্রার্থী নতুন এক ইতিহাস গড়তে সক্ষম হয়েছেন। ১ নং ওয়ার্ডে হাসিনা রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলরসহ তিনজন এবং ৮ নং ওয়ার্ডে নার্গিস আক্তার ইভার প্রতিদ্বন্দ্বী ছয়জন পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী।

হাসিনা রহমান :
বাগেরহাট পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিনা রহমান মহিলা পরিষদ, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিজীবী ও দুই পুত্র সন্তানের জননী। ২০১১ সালে তিনি বাগেরহাট পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত ১ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এবার সংরক্ষিত মহিলা আসনে নয় সরাসরি কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে তিনি নির্বাচন করছেন এবং জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।

হাসিনা বলেন `এই এলাকায় আমার জন্ম এবং একই সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি। গত পৌর নির্বাচনে এই এলাকা থেকে আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছি।‘সন্ত্রাস, মাদক আর নাগরিক অসুবিধা দূর করতে এলাকাবাসীর অনুরোধে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন জানিয়ে হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ড পৌরসভা উত্তর প্রান্তে। এখানে নিম্ন ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ বেশি। এলাকায় পানি বা বিদ্যুতের মতো নাগরিক সুবিধাগুলো আরও বেশি করে নিশ্চিত করা দরকার। বিগত সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মানুষের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।`

নার্গিস আক্তার ইভা :
বাগেরহাট পৌর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নার্গিস আক্তার ইভা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক শিশু কন্যার জননী। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।

তবে এবার তার ৮ নং ওয়ার্ডের ছয় পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী রয়েছেন। প্রাথী নার্গিস আক্তার ইভা বলেন, ‘আমার পারিবারিক পিছুটান কম। মানুষের মাঝেই আমার সময় কাটে। এলাকার নারীদের অসংখ্য সমস্যা। কিন্তু তারা পুরুষ কমিশনারদের কাছে তাদের সমস্যা জানাতে পারেন না। এই বিষয়টি দেখে আমি কাউন্সিলর পদে সরাসরি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি আরও জানান, তার এলাকার পানি একটি বড় সমস্যা। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি এলাকার পানি সমস্যা সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ যথেষ্ট ভাল জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকলে তিনি বেশ বড় ব্যবধানেই জয়ী হবেন বলে আশা করেন।

১৯৯৯ সালে বাগেরহাট পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে কমিশনার পদে নির্বাচন করেছিলেন সমীর কুমার সাহা। এবারও তিনি ৫ নং ওয়ার্ডের পাঞ্জাবী প্রতীকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই নারীর সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন `আমার বয়স আর বাগেরহাট পৌরসভার বয়স প্রায় একই। আমার জানা মতে, বাগেরহাট পৌরসভায় এবারই প্রথম কোনো নারী প্রার্থী সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে লড়ছেন। তাদের জন্য আমার শুভ কামনা রইল।`   

বাগেরহাট পৌরসভার বর্তমান মেয়র খান হাবিবুর রহমান ২০০৪ সাল থেকে টানা তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেও তিনি একবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক সময়তো এমনটি ভাবাই যায়নি। আমার জানা মতে, বাগেরহাট পৌরসভার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হলেন। এটা ব্যতিক্রম ও তাৎপর্যপূর্ণ। তারা বাগেরহাট পৌরসভার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করেছেন।`

শওকত আলী বাবু/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।