অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত জাবি
পিচঢালা পথ আর লাল ইটের দালানের পাশে ডজনখানেক সুবিস্তৃত লেক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। এসব লেকে আসতে শুরু করেছে নানা প্রান্ত থেকে অতিথি পাখি। অতিথি পাখির চুই চুই শব্দে মুখরিত জাবি। ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এসে বসতে শুরুছে ক্যাম্পাসের লেকে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লেকের পানিতে আর ক্যাম্পাসের আকাশে অতিথি পাখির আনাগোনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রশাসনিক ভবনের সামনে, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক এবং জিমনেসিয়োমের পাশে সুইমিং পুল সংলগ্ন লেকে এবার অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি। অতিথি পাখিরা এ লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার সবচাইতে বেশি পাখি এসেছে সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকে। লিজ মুক্ত, লেকের পাশে বন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ থাকার কারণে অনেক বেশি পরিমাণ পাখি এই লেকে এসেছে বলে পাখি গবেষকরা মনে করছেন।
ইতোপূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশাসনিক ভবনের সামনের এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক দুটি অতিথি পাখির জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। পাখিদের বসার জন্য লেকগুলোয় মাছ চাষ বন্ধ করে শাপলা ফুল বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে প্রায় ১০ প্রকার অতিথি পাখি আসে জাবিতে। যেসব অতিথি পাখি এখানে আসে তার মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া ও পাতারি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোটনগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, মুরগ্যাধি, কোম্বাডাক, পাতারি হাঁস, জলকুট, খয়রা ইত্যাদি পাখি সবার নজর কাড়ে।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাত পাখি থাকার অনুকূল না হওয়ায় পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যতম।
এদেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল, এ তিনটি পর্যায়ে অতিথি পাখিরা আসে। মূলত নভেম্বর মাসেই এরা বাংলাদেশে আসে। আবার মার্চের শেষদিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আল মাহাদী বলেন, জাবি অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অতিথি পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের উচিত, অতিথি পাখিদের দিকে ঢিল ছুড়ে বিরক্ত না করা। তবেই এ ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি গবেষক মো. কামরুল হাসান জানান, এ বছরে ক্যাম্পাসে আসা অতিথি পাখির মধ্যে ৯৫ শতাংশ ছোট সরালি। কিছু বড় সরালি আছে। এছাড়া রয়েছে লেঞ্জা, বালি, নক্তা ও ভূতি হাঁস। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসবে। এসব পাখি সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, কাশ্মীর ও হিমালয়ের আশপাশ থেকে আসে।
তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জলাশয়গুলোয় পাখিরা খাবার ও নিরাপত্তা পাবে, সেখানেই বেশি আসবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও জলাশয়গুলোকে পাখির জন্য উপযোগী করতে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই নেই। যেসব জলাশয়ে পাখি আসে, সেগুলো অন্যান্যবার সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় এবং প্রচারণাও চালানো হয়। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই করা হচ্ছে না।
কামরুল হাসান জানান, জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে পাখিমেলার আয়োজন করা হতে পারে। কারণ, সে সময় পাখির সংখ্যা বেশি থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো আমরা পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পাখিমেলার আয়োজন করা হবে।
জেডএইচ/পিআর