গেইল থাকলে জিততো বরিশাল!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের জন্য যা যা করার তার সবই করেছিল বরিশাল বুলস। ব্যাটিংয়ে যেমন ১৫৬ রানের বিশাল একটি ইনিংস গড়েছিল, তেমনি বোলিংয়েও দলটি ছিলো দুর্দান্ত। অসাধারণ ফিল্ডিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসিটা হাসলো মাশরাফির কুমিল্লা। ম্যাচের একেবারে শেষ বলে এসে হেরেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলস।
টস জিতে যখন বরিশালকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানালেন মাশরাফি, তখনই হয়তো অনেকে ভেবে নিয়েছিল, টস জয় মানেই তো এখানে ম্যাচ জয়। সুতরাং, কুমিল্লাই হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ওপেনার মেহেদী মারূফ আর সেকুগে প্রসন্ন সেই ধারনা পাল্টে দিতে শুরু করেন। চার-ছক্কা দিয়ে ইনিংস শুরু করেও অবশ্য মেহেদী মারূফ ১১ রান করে আউট।
সেকুগে প্রসন্ন খানিকটা ঝড় তুলেছিলেন। ১৯ বলে করেছিলেন ৩৩ রান। দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে এলো মোট ৪৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে একেবারে খারাপ বলা যায় না। তবে, ফাইনালের মত ম্যাচে এই রানকে ভালো বলারও উপায় নেই। কারণ, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ভার্সনে প্রতিটি দলই চেষ্টা করে, প্রথম ৬ থেকে ৮ ওভারের মধ্যে উইকেট ধরে রেখে রান বের করে নিয়ে আসার। এই অংশটা নিয়ে একটা পরিকল্পনা থাকে আলাদা করে। ওপেনাররাই এই অংশটা শেষ করে দিয়ে আসবেন।
কিন্তু ৬ থেকে ৮ ওভারের মধ্যে যদি দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত দল বিপদে পড়তে বাধ্য। এবারের বিপিএলে শিরোপা চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফির মুখ থেকে বার বারই শোনা গিয়েছে, ওভার বাই ওভার দলগুলোর পরিকল্পনার কথা। পরিকল্পনা সফল হলে দিন শেষে একটা দলের সফলতা আসে। অন্যথা হলে, সফলতাও থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
তো, বিপিএলের ফাইনালে যখন ৮ ওভারের মধ্যে প্রসন্ন আর মেহেদী মারূফকে হারিয়ে ফেলল বরিশাল (রান তখন ৫৪), তখন কিছুটা হলেও হতাশা বিরাজ করছিল বরিশাল সমর্থকদের মধ্যে। হতাশাটা ছিল, যদি ক্রিস গেইল থাকতেন, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকমও হতে পারতো। দেখা যেতে, এক প্রান্তে একটা দু’টা উইকেট পড়লেও, ঠিকই একের পর এক বিগ শট খেলে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসছেন গেইল।
চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে যেমন ৪৭ বলে খেলেছিলেন ৯২ রানের ইনিংস, তেমনি বিপিএলের ফাইনাল খেললে নিশ্চিত, বরিশাল তেমনই একটি ইনিংসের দেখা পেতো। তাহলে কুমিল্লার সামনে স্কোরটা অন্তত ‘পাহাড়’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া যেতো। যে ৬ থেকে ৮ ওভারের পরিকল্পনা থাকে, সেটাও যদি খেলেন, গেইল তাতেও রান চলে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কারণ, বিপিএলের ফাইনালে দেখা গেছে ৭.৫ ওভারে (অষ্টম ওভারের ৫ম বলে) দ্বিতীয় উইকেট পড়েছে বরিশালের। রান তখন ৫৪। গেইল থাকলে এই রানটাই হয়তো থাকতো ৭০-এর ওপর। নিশ্চিত ২০ থেকে ২৫ টা রান কমে গেছে বরিশালের। এসব চিন্তা থেকে বরিশাল সমর্থকরা আফসোস করছিলেন, ‘আর দুটো দিন কি ধরে রাখা যেতো না গেইলকে! তার সঙ্গে চুক্তিটাই বা কেমন হয়েছে যে, ফাইনালের আগেই চলে যেতে হলো তাকে!’
তবে ফাইনাল শেষে সেই বরিশাল সমর্থকদের মুখ থেকে আফসোস কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ, ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৬৮ রানের মাথায় যখন সাব্বির রহমান বোল্ড হলেন, এরপর জুটি বাধেন শাহরিয়ার নাফীস আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই জুটিই তো গেইল না থাকার আফসোস ভুলিয়ে দিয়েছিল বরিশাল সমর্থকদের মন থেকে। ৫৬ বলে ৮১ রানের জুটি গড়ে মাশরাফির কুমিল্লার সামনে ১৫৬ রানের চ্যালেঞ্জ তৈরী করে দিতে পেরেছিলেন তারা দু’জন।
নীরব ঘাতক যাকে বলে, সেটাই করে দেখালেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মনে হচ্ছে যেন ব্যাটে কোন ঝড় নেই। কিন্তু সত্যিকারার্থেই ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ৩৬ বলে অধিনায়োকোচিত ৪৮ রানের ইনিংস, ফাইনালের অন্যতম পাশ্ব নায়কে পরিণত করেছে তাকে। আর শাহরিয়ার নাফীস তো দেখালেন যেন বুড়ো হাঁড়ের ভেলকি। ৩১ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংস। ফাইনালের মত মঞ্চে এর চেয়ে আর খুব বেশি কি চাওয়ার আছে বরিশাল বুলসের সমর্থকদের!
১৫৬ রানের ইনিংসটাকে তো ভালোই পুঁজি বানিয়ে ফেলেছিল মাহমুদুল্লাহরা। শেষ বলে এসে যে ম্যাচের সমাপ্তি ঘটে, সেটাতে যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে, তা খালি চোখেই দেখা যায়। আর যারা বিপিএলের ফাইনাল সরাসরি কিংবা টিভিতে দেখেছেন, তারা তো সম্ভবত স্নায়ুর সর্বোচ্চ উত্তেজনায় ভুগছিলেন তখন। শিরদাঁড়া বেয়ে দরদর করে ঘাম বেয়ে পড়ছিল। অলক কাপালির অতিমানবীয় ২৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংসটা না হলো তো বরিশালই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল বিপিএলে। কিন্তু লড়াইটা যে শেষ বল পর্যন্ত হয়েছে, তাতেও বেশ খুশি বরিশাল বুলসের সমর্থকরা।
তবু, গেইল থাকলে আর ক’টা রান বেশি হতে পারতো, শেষ মুহূর্তের শ্বাসরূদ্ধকর ওই লড়াই শেষে বরিশাল বুলসই জিততে পারতো, তা অনেক সমর্থকেরই আফসোস হয়ে রয়ে গেলো বিপিএল ফাইনাল শেষে।
আইএইচএস/পিআর