অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার দিল টিআইবি
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার দিয়েছে। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ টিআইবি কার্যালয়ের মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতা ২০১৫’এর পুরস্কার ঘোষণা এবং ‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেল এর সম্পাদক মিজান মালিক এবং নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ। এ প্রতিবেদনে সাহসিকতার সঙ্গে ভিডিওচিত্র ধারণ করায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক কাজী মোহাম্মদ ইসমাইল’কেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জি এম মোস্তাফিজুল আলম বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
প্রতিবেদনটির ভিডিও চিত্রগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম রতনকেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিচারকমণ্ডলীর বিবেচনায় মান সম্মত প্রতিবেদন না পাওয়ায় এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগ ও ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ে প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে কাউকেই পুরস্কার দেয়া হয়নি। বিজয়ী সাংবাদিকদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লক্ষ টাকার চেক এবং দুই ভিডিও চিত্রগ্রাহকের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে চেক পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী এবং সভাপতিত্ব করেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. আকবর আলি খান।
‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, এমআরডিআইর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক ঝুঁকি থাকার পরও দেশের গণমাধ্যম চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালো কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যম সরকারের সহযোগী ও সহযোদ্ধা হিসেবেই কাজ করে থাকে। তাই গণমাধ্যম যেমন সরকারের ইতিবাচক তথ্য প্রচার করবে, তেমনি সরকারের সমালোচনাও করবে। এই সমালোচনা সরকারকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান করায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। সরকারও এই বিষয় সম্পর্কে অবগত। বর্তমান সময়ে এসে কোনো সংবাদ প্রকাশে কোনো সরকারই বাধা দিতে পারে না। গণমাধ্যম নানা উপায়ে সে সংবাদ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র সরকারের দিক থেকেই বাধাগ্রস্থ হয় না। এ ক্ষেত্রে সম্পাদকদের ওপর মিডিয়ার কর্পোরেট মালিকদের খবরদারির বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, অনেক দুর্বলতা স্বত্ত্বেও দেশের গণমাধ্যমের যে অর্জন তা গর্ব করার মত। বিশেষ করে বিশ্বে সুশাসনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে হলেও গণমাধ্যমের অর্জন প্রশংসনীয়।
প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে বিজয়ী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল ‘বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় বিদেশী বন্ধু ও সংগঠনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া সম্মাননা ক্রেস্টে ১৬ আনা (১ ভরি) পরিমাণ স্বর্ণ না দিয়ে মাত্র সোয়া তিন আনা স্বর্ণ দেয়ার চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী মিজান মালিক ও সাজ্জাদ পারভেজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘১০ দিনে বিবিএ পাশ’-এ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিনব প্রতারণা ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’বিষয়ক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি’ শিরোনামে বিজয়ী প্রতিবেদনটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এইচএস/এএইচ/এমএস