সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া নৌযানের খোঁজ মেলেনি
বাগেরহাটের মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া এলাকায় ডুবে যাওয়া আল হেলাল-১ নামের ভলগেট নৌযান উদ্ধারে এখনো কোনো তৎপরতা শুরু হয়নি। তবে শুক্রবার নৌযানটি ডুবে যাওয়ার স্থান চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।
নৌযানটি কবে উদ্ধার করা হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না মংলা বন্দর কতৃপক্ষ। অন্যদিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা চরে আটকে পড়া ফ্লাই আ্যাশবাহী জাহাজ এমভি শোভন-১ গত তিন দিনেও উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার ৫ নম্বর বয়ায় থাকা বিদেশি জাহাজ এমভি ইয়ানচুন পণ্য খালাস শেষে বন্দর ত্যাগ করে। এ সময় আল হেলাল-১ নামক একটি নৌযানে (ভলগেট) করে ওই জাহাজ থেকে গ্রাফ (পণ্য ওঠা-নামানো ও খালাসের যন্ত্র) নিয়ে মংলায় আসার সময় পথিমধ্যে দুপুর ২টার দিকে নৌযানটি তলা ফেটে ডুবে যায়।
এরপর থেকে বন্দর চ্যানেলের ওই অংশ চরমভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। নৌপথটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় হাড়বাড়িয়ার ৫ নম্বর বয়াতে এমভি ফনিক রাইজিং নামক অপর একটি বিদেশি জাহাজ বৃহস্পতিবার ভেড়ার সিডিউল থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।
সন্ধ্যায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য আলতাফ হোসেন জানান, মংলার সাবেক পৌর মেয়র শেখ আব্দুস সালামের ডুবে যাওয়া যান্ত্রিক ভলগেটটি উদ্ধারের জন্য প্রাথমিকভাবে স্থান নির্ণয়ের কাজ করেছে মালিক পক্ষ। এ কাজে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করছে। এ কাজ শেষ হলে ভলগেটটি উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
অন্যদিকে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা চরে আটকে পড়া ফ্লাই আ্যাশবাহী জাহাজ এমভি শোভন-১ উদ্ধার কাজ গত তিন দিনেও শুরু হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে এমভি সাথীভাই নামের উদ্ধারকারী একটি কোস্টার জাহাজ ও ৩০ জন শ্রমিক ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও অজ্ঞাত কারণে কাজ শুরু করতে পারছে না।
এ ঘটনায় শুক্রবার শরণখোলা থানায় কার্গোর মালিক পক্ষ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
অন্যদিকে, ধীরে ধীরে পলি জমে আটকে যাচ্ছে জাহাজটি। ইতিমধ্যে জাহাজের উপরিভাগের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ফাটল দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ঘটনাস্থল সুন্দরবনের মরাভোলার চর গিয়ে এ অবস্থা দেখা গেছে।
পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্ঘটনার পর থেকেই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা একেএম ইউসুফ আলমের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা সার্বক্ষণিক দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
জাহাজের সুকানী (চালক) মো. রাব্বি জানান, জাহাজের পেছনের অংশ বালুতে আটকে গেছে। সামনের দিকে পানির গভীরতা বেশি থাকায় জাহাজটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় মাঝখান থেকে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিতে পারে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, দুর্ঘটনা কবলিত কার্গোটি রোববার থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করবে মালিক পক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ২ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা চরে ৭৪০ মেট্রিক টন ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ে এমভি শোভন-১ নামের জাহাজটি আটকে পড়ে। রাতের বেলা ঘন কুয়াশায় চালক দিক হারিয়ে ফেলায় জাহাজটি চরে উঠে যায়।
মেসার্স আলমগীর নেভিগেশন কোম্পানির ওই জাহাজটি গত ২৫ নভেম্বর ভারতের বজবজিয়া এলাকা থেকে সিমেন্ট তৈরির কাচামাল বোঝাই করে ঢাকার মুক্তাপুর আমিরাত সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনার শিকার হয় জাহাজটি।
শওকত আলী বাবু/এআরএ/একে