ব্ল্যাক ছবির মুক্তি নিয়ে মামলায় জড়ালেন প্রযোজকেরা!


প্রকাশিত: ০৭:০৮ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘ব্ল্যাক’ শুরু থেকেই নানা কালোতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। দেশে প্রচলিত চলচ্চিত্রের নীতিমালায় যৌথ-প্রযোজনার নীতিকে তোয়াক্কা না করেই সেন্সরে জমা পড়েছিলো ছবিটি। করেনি বলতে- কলকাতার দাদাগিরিতে নিয়ম অনুসরণ করতে পারেননি বাংলাদেশের প্রযোজক ও পরিচালক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু।

তিনি না পেরেছেন যৌথ পছন্দ অনুযায়ী গল্প বাছাই করতে, না পেরেছেন ওপারের পাশাপাশি এপারের সমান সংখ্যক শিল্পীদের অভিনয় নিশ্চিত করতে, না পেরেছেন দুই দেশের সমান শিল্পীদের দিয়ে গান তৈরি করাতে, না পেরেছেন সমানভাবে বাংলাদেশে ছবিটির শুটিং করতে। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি ঢাকার গণমাধ্যমগুলোতে। লিপুর পাশাপাশি কলকাতার রাজা চন্দ পরিচালিত ‌‘ব্ল্যাক’ নিয়ে নেতিবাচক এইসব সংবাদে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং তারা ছবিটি যৌথ-প্রযোজনার সঠিক নিয়মে নির্মিত হয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত করতে মাঠে নামায় প্রতিনিধি দল।

তবে ব্ল্যাক ছবিটি এবার খবরে এলো মামলায় জড়িয়ে। জানা গেছে, ছবি মুক্তি দেয়ার চুক্তি ভঙ্গ করায় কলকাতার প্রযোজক দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার রানা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন বাংলাদেশে প্রযোজক-পরিচালক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু।

জানা গেছে, ছবিটির চুক্তিপত্রে ছিলো একই দিনে দুই দেশে মুক্তি পাবে ‘ব্ল্যাক’। কিন্তু ছবিটি ঢাকায় আটকে গেলেও ২৭ নভেম্বর কলকাতায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। ঢাকার প্রযোজক কলকাতার প্রযোজককে অসংখ্যবার অনুরোধ করেন ছবির মুক্তি পিছিয়ে দিতে। কিন্তু তা মানতে নাড়াজ রানা সরকার।

বাধ্য হয়ে উপায় না দেখে লিপু কলকাতার হাইকোর্টে ছবিটির প্রদর্শনী স্থগিত করার জন্য মামলা করেছেন। কিন্তু ছবিটি শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ায় কলকাতার হাইকোর্ট আরজি আমলে নেননি। তবে বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চ দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের টিকেট বিক্রির টাকা ব্যাংকে রাখার জন্য।

চুক্তিতে শর্ত ভঙ্গের ফলে কোনো প্রযোজক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তী শুনানির শেষে বিচারক এ সংক্রান্ত রায় দেবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে লিপুর মোবাইলে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। অবশেষে তার ম্যানেজার রুহুল জাগো নিউজকে জানান, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি কিন্তু নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে লিপু সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। তিনি ঢাকাতেই রয়েছেন। তার সাথে যোগাযোগ করুন।’

এদিকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলছেন দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার আড়ালে আগাগোড়াই একটি কলকাতার ছবি ‘ব্ল্যাক’। ছবিটিতে ওপারের নায়ক সোহমের বিপরীতে বাংলাদেশের বিদ্যা সিনহা মিমকে চুক্তিবদ্ধ করে ছবিটিকে ঢাকাই ছবির একটা লেভেল দেয়ার চেষ্টা চলেছে মাত্র। সেটা লিপুও টের পাননি, ছবির নায়িকা মিমও আঁচ করতে পারছেন না। আর পারছেন না বলেই কিছু না বুঝেই মিম ওপারে ‘ব্ল্যাক’ ছবির প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন। কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু হয়েছেন প্রতারণার শিকার।

তবে এসবের জন্য চলচ্চিত্রপাড়ায় সবাই লিপুকেই দায়ি করছেন। স্বার্থে টান পড়ায় কলকাতার প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তিনি নিজেও কিন্তু নিয়ম মানেননি যৌথ প্রযোজনার। পাশাপাশি সেন্সর ছাড়পত্র নিশ্চিত না হলেও ব্ল্যাক’র পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর। সেইসাথে বুকিং দেয়া হয়ে গেছে সিনেমা হলও! সেন্সরের অনুমতি ছাড়া যেখানে পোস্টার করা যায় না সেখানে ব্ল্যাক কেমন করে প্রচারণা চালাচ্ছে সেটা সত্যি ভাবনার বিষয়।

এই ঘটনা দেখে যারা হুট করেই কলকাতার সাথে কিছু না বুঝে, কোনো নিয়ম-রীতি না মেনেই যৌথ প্রযোজনার ছবি বানাতে যান তাদের জন্য দারুণ দৃষ্টান্ত। দেশের প্রযোজক ও পরিচালকদের শুভ বুদ্ধির উভয় হোক।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।