হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগাক্রান্ত
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এক্স-রে মেশিন বিকল, অপারেশন থিয়েটার পরিত্যক্ত, ১৭ বছর যাবত বন্ধ জেনারেটর, খাবার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন। তাছাড়া ডাক্তারদের রোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি আর দালালদের দৌরাত্ম্যসহ নানা সমস্যা নিয়ে নিজেই এখন রোগাক্রান্ত ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জাগো নিউজকে জানান, ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ মে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর অব. মো. রফিকুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। এ সময় সংযোজন করা হয় অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার, শক্তিশালী জেনারেটরসহ চিকিৎসা সহায়ক বিভিন্ন সুবিধাদি। নিয়োগ দেয়া হয় পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সে সময় হাইমচর ও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ও শরিয়তপুর জেলার অনেকে এ হাসপাতালে সেবা নিতে আসতেন। অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ১৫ জন ডাক্তারের মধ্যে ১১ জন, ৯ জন নার্সের মধ্যে ৪ জন, ২৯ জন স্বাস্থ্য সহকারীর মধ্যে ১৯ জনসহ ১২৪ জন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৮৫ জন কর্মরত রয়েছে। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও ব্যবহার না করার কারণে বর্তমানে মেশিনপত্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সংযোজনের এক মাসের মাথাই বিকল হয়ে পড়ে। যা আজও সচল করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালটিতে একটি বিশাল জেনারেটর স্থাপনের কিছু দিনের মধ্যে সেটি বিকল হয়ে যায়। বর্তমানে এই জেনারেটরটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে পানির ব্যবস্থায় ডিপটিউবয়েল স্থাপন করা হয়েছিল কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের কারণে এ ডিপটিউবয়েলের পানি খাওয়ার অনুপযোগী।
১১ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও মাসিক রোটেশন পদ্ধতিতে দায়িত্ব বন্টন করে দেয়ার কারণে প্রতিদিন ২/৩ জন ডাক্তারের বেশি থাকে না। দন্ত বিভাগে একটি আধুনিক চেয়ার থাকলেও যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ না থাকার কারণে দন্ত রোগীদের পরামর্শ ছাড়া আর কোনো সেবা দেয়া হয় না। এছাড়াও রয়েছে ডাক্তারদের বসার ও আবাসন সমস্যা। অন্যদিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও স্থানীয় দালালদের দৌরাত্ম্যও অপ্রতিরোধ্য।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী খোরশেদ আলম, নুরুল ইসলাম, মানিক মিয়া, পারভীন আক্তার, শেফালি বেগমসহ আরও অনেকে জাগো নিউজের এ প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করে বলেন, এ হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য আসা-যাওয়া করলেও ডাক্তারের দেখা মিলে না। আর কখনো ডাক্তারের দেখা মিললেও চিকিৎসা সেবা বলতে কিছুই পাওয়া যায় না। ২/১টি ওষুধ লিখে দেন মাত্র। যার কারণে আমরা কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছি না।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আখলাক আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালে অনেক সমস্যা আছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধান করে হাসপাতালটিকে যথা সম্ভব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করব।
এসএস/এমএস