মুজাহিদের শেষ ঠিকানা নিয়ে সংশয়
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিচারিক প্রক্রিয়ার সবগুলো অধ্যায় শেষ। ইতোমধ্যে তাকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। এখন বাকি প্রাণভিক্ষা পাওয়া অথবা মৃত্যুদণ্ড ভোগ করা।
প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না জানিয়ে মুজাহিদের ভাই ফরিদপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আলী আফজাল মোহাম্মাদ খালেজ বলেন, আমার ভাই সম্পূর্ণ নির্দোষ। একাত্তরে মুজাহিদ কোনো অপরাধ করেনি। এটা রাজনৈতিকভাবে তাকে হত্যা করা হচ্ছে।
মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রায় যেকোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে। তবে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের পর শেষ ঠিকানার কথা এখনও জানা যায়নি। বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের পাশে ? না পারিবারিক কবরস্থান ? নাকি শহরের কোনো গোরস্থানে ? নাকি রাজধানী শহরে ?
সৌদি আরবে হজ পালনকালে মারা গিয়েছিলেন মুজাহিদের বাবা মাওলানা আব্দুল আলিম। এরপর সেখানেই তার মরদেহ দাফন করা হয়েছিলো। আর মা নূরজাহান খানম ১৯৯৮ সালে মারা যাওয়ার পর দাফন করা হয় শহরের আলীপুর কবরস্থানে। আলী আহসান মুজাহিদরা ছিলেন সাত ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে তিনজনই মারা যান অনেক আগে। ফরিদপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পশ্চিম খাবাসপুরে বাবার পৈত্রিক জমির উপর মুজাহিদসহ কয়েক ভাইয়ের বসবাস। ওই বাড়িতে এখন শুধু এক ভাইয়ের বসবাস। বাকি তিন ভাইয়ের বসবাস দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাতে।
পৈত্রিক এই বাড়িতেও কোনো পারিবারিক কবরস্থান নেই বলে জানান, মুজাহিদের প্রতিবেশি নাহিদুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, এখন এই বাড়ির প্রত্যেকের জমি-জায়গা আলাদা। মুজাহিদের জমিতেও কয়েকটি ঘর তুলে রাখা হয়েছে। সেখানে কবর দেওয়ার মতো ফাঁকা জায়গাতো দেখা যায় না বলেও তিনি জানায়।
মুজাহিদের সম্ভাব্য শেষ ঠিকানা হতে পারে শহরের আলীপুর কবরস্থানে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
তবে এখনও পর্যন্ত পারিবারের লোকজনের কাছ থেকে তার (মুজাহিদ) দাফনের স্থানটি কোথায় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ভাই আলী আফজাল মোহাম্মাদ খালেজ জানান, আমাদের ইচ্ছা ফরিদপুরে আনার। এখন তার পরিবার ও ছেলেদের সঙ্গে কথা না বলে বলতে পারছি না।
এদিকে, ফরিদপুরে দাফনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জেলার অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই দৃঢ়তার সঙ্গে মুজাহিদকে ফরিদপুরে দাফন না করার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী কাউকেই যুদ্ধাপরাধীরা ছাড় দেয়নি। ফাঁসির রায় কার্যকরের পর তার মরদেহ ফরিদপুরে আনা থেকে তার পরিবার বিরত থাকুক সেই দাবিই করি।
কোতয়ালি আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, তার বাড়ি ফরিদপুরে হলেও ১৯৭১ সালে তার যে বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতার পরিচয় পাওয়া গেছে আজ তার বিচার হয়েছে। তাই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ফরিদপুরবাসী কলঙ্কমুক্ত হতে যাচ্ছে। তার মরদেহ ফরিদপুরে দাফন করে আর কলঙ্ক বহন করতে চাই না।
একাত্তরে যে গণহত্যা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে মারা হয়েছিলো। তখন তো নিহতদের মরদেহগুলো কে কি করা হবে ? কুকুরে না শিয়ালে খেলো ? কোথায় দাফন করা হলো ? সেই শ্রদ্ধাটুকু যুদ্ধের সময় জানায়নি তারা।
তাই আমাদেরও এখন তার দাফন নিয়ে সহমর্মিতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। ফরিদপুরবাসীকে নিয়েই তার মরদেহ দাফনের ব্যাপারে আপত্তি জানাতে চায় বলে জানান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী।
এস এম তরুন/এআরএ/এমএএস/পিআর