পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেবে জামায়াত
দেশজুড়ে বইছে পৌর নির্বাচনী হাওয়া, সবখানে বিরাজ করছে ভোটের উত্তাপ। সংসদের বাহিরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন করবেন কি-না সে বিষয়ে সুস্পস্ট তথ্য এখনো মেলেনি। তবে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও তারা স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সারাদেশেই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে জামায়াত। কেন্দ্রীয় নিদের্শনা অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রার্থিতাও চূড়ান্ত করেছে দলটি।
নিবন্ধন বাতিলের কারণে আগামী ডিসেম্বর ও মার্চে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি সংশোধিত আইনেও দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে (দাঁড়িপাল্লা) কেউ অংশ নিতে পারবে না- এমন বিধান থাকছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে কেবল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই অংশ নিতে পারবে। ফলে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত ওই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলীয় পরিচয়ে দলের প্রতীকে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী আইনে যদি সংশোধনী আনা হয় তাহলে অনিবন্ধিত বা নিবন্ধন বাতিল হওয়া কোনো দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
জানা গেছে, নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের মতো সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অযোগ্য হলেও বসে নেই জামায়াত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলেও জামায়াত-শিবির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার কৌশল নিয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
সূত্রগুলো জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হলেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছেনশীর্ষ নেতৃত্বকে। জেলা ও উপজেলা আমির-সেক্রেটারিদের অনেকেই শীর্ষ নেতাদের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তারা জয়ী হবেন।
দলীয় সূত্র মতে, জামায়াতের হাইকমান্ড দলটির তৃণমূল থেকে মতামত গ্রহণ করেছে। মতামত জানিয়েছেন- জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আমির ও সেক্রেটারিরা। স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচনের বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে ইতিবাচক উত্তর আসার পরই দলটি প্রয়োজনে জোটের বাইরে গিয়ে এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে কাজ শুরু করেছে।
তবে নেতারা বলছেন, এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে তাকে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। তার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশ নিলে নিজেদের অবস্থান কতটুকু নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়েও চিন্তিত জামায়াত-শিবির নেতারা। শীর্ষ নেতারাই বলছেন, দলীয় বা জোটগত যেভাবেই হোক বিপাকে পড়তে হবে। যেহেতু নির্বাচন কমিশনে দলীয় নিবন্ধন স্থগিত, সে কারণে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নিজেদের প্রার্থীদের পরিচয় দিতে হবে। এমন অবস্থায় বিএনপি কয়টি এলাকা জামায়াতকে ছাড়বে, সে প্রশ্ন আছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করেছে দলটি। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ কমিটিতে নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিন, ড. রেজাউল করিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কাজ করছেন।
জামায়াতের একাধিক নেতা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নিতে উৎসাহী। এ জন্য জাতীয় নির্বাচনের মতো বর্জন করলে স্থানীয় রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
নির্বাচনের জন্য গোপনে নিজেদের প্রস্তুত করলেও অবশ্য জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, স্থানীয় সরকারের সর্বস্তরে দলীয় প্রতীক ও দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করার জন্য যে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদে গ্রহণ করা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।
গত উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান পদে ৩৪ জন, ১৩৪ পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান ও ৪৫টির বেশি নারী ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়েছিল। সে হিসেবে এবার পৌরসভা ও আগামী দিনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ‘ভাল’ফলাফল আশা করছে দলটি।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় জামায়াত নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে কার্যক্রম চালায়। জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
এরপর ২০১৩ সালে ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে জামায়াত দলীয়ভাবে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। তবে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াত। সেটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়াকে আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।
আসন্ন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, তৃণমূলের এ নির্বাচনগুলোকে দলীয়ভাবে কারার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ছে তা গণতন্ত্রের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।
তিনি বলেন, একদিকে আগামী মাসে নির্বাচন করবে আর অন্যদিকে সরকার সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরসহ বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের জেলে আবদ্ধ করে রাখছে। এর মাধ্যমে দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সরকার।
হামিদুর রহমান আযাদ অভিযোগ করে বলেন, দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, ছিনতাই, ডাকাতি অব্যাহতভাবে চলছে। সেদিকে সরকারের কোনো নজর নেই। সরকার বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে শক্তির জোরে ক্ষমতায় থাকার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
এএম/এসএইচএস/আরএস/একে/পিআর