আলোকিত ঈমানের পরিচয়
কুরআনুল কারিম। ভাব, ভাষা, উচ্ছাস, আদর্শের অপূর্ব তরঙ্গ। যার তিলাওয়াত মানব মনে সৃষ্টি করে আধ্যাত্মিক বিপ্লব। যে ব্যক্তিই কুরআনের কাছে আসে, তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ও চিন্তাধারা তথা গোটা জীবনই পরিবর্তন করতে উদ্বুদ্ধ হয়। যা অন্য কোনো গ্রন্থের সংস্পর্ষে সম্ভব নয়।
কুরআনের মহান শিক্ষা মানব মনে আল্লাহর প্রেম জাগরিত করে এবং ঈমান হয় সুদৃঢ়। পৃথিবীর লোভ-লালসা তাকে আকৃষ্ট করতে পারে না। এমনকি কঠিন ও কঠোর জুলুম-অত্যাচার, উৎপীড়ন-নির্যাতনও তাঁকে আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে মুহূর্তের জন্যও বঞ্চিত করতে পারে না। যার অসংখ্য নজির স্থাপন করেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগন। ইসলামের আলোকিত ঈমানের একটি নমুনা তুলে ধরা হলো-
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে রোম সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালিত হয়, সে অভিযানের সেনাপতি ছিলেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু। ঘটনাক্রমে তাঁরা সবাই রোমক সম্রাজ্যে দুশমনের হাতে বন্দি হলেন। তাঁদেরকে সম্রাটের সামনে হাজির করা হলো। সম্রাট ইসলামের সেনাপতিকে এক লোভনীয় ও ভয়ংকর শাস্তির প্রস্তাব করল যে, তুমি যদি ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হও, তবে আমি আমার রাজত্বে তোমাকে অংশীদার করব। সম্রাটের ধারণা ছিল মরুবাসী সেনাপতি অর্থ-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, শক্তি-সামর্থ্যের লোভে তার কথায় রাজি হয়ে যাবে।
কিন্তু সে জানত না যে, যিনি একবার হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন, কুরআনের মহান শিক্ষাকে বুকে ধারণ করেছেন, তাঁকে সমগ্র পৃথিবীর বিনিময়েও ইসলাম থেকে সরানো সম্ভব নয়। হজরত আবদুল্লা ইবনে হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্রাটের প্রস্তাব সরাসরি ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখ্যান করলেন।
সম্রাট ফরমান জারি করলেন, তাঁকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে এবং তার প্রতি বর্ষা নিক্ষেপ করে ধ্বংস করে দাও। নির্দেশ মোতাবেক তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে আনা হলো। মৃত্যু তাঁর সামনে নৃত্য করছিল। কি আশ্চর্য! আল্লাহর এ পেয়ারা বান্দা রাসুলের সাহাবার চোখে মুখে ভয়, অস্থিরতা, ব্যকুলতা ও দুশ্চিন্তার সামান্যতম চিহ্নও নেই। যা সম্রাটকে বিস্ময় ও অপমানিত করলো। তাই সম্রাট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো তাঁকে ফাঁসির মতো সহজ শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না। নির্দেশ দেয়া হলো তাঁকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নিয়ে এসো।
সম্রাট নতুন ফরমান জারি করলেন, একটি বড় পাত্রে পানি গরম কর। সেই ফুটন্ত পানিতে হজরত আবদুল্লাহর সামনে তাঁর এক সঙ্গীকে নিক্ষেপ করা হলো। দেখা গেল, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দেহের হাড় থেকে গোশতগুলো খসে পড়েছে। তখন সম্রাট ইসলামের সেনাপতিকে বললো, ‘যদি তুমি নিজের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ না কর, তবে তোমাকেও এ শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ এ ভয়াবহ দৃশ্যও হজরত আবদুল্লাহকে এক বিন্দু টলাতে পারেনি। তিনি স্পষ্ট জবাব দিলেন, ‘আমি ফুটন্ত পানিতে নিক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সম্রাটের সৈন্যরা তাঁকে হাত পা বেঁধে ফুটন্ত পানির পাত্রের কাছে নিয়ে আসলে সম্রাটের একটি কথা মনে পড়ে যায়, যখন তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হয়েছিল তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন এবং ঐ মুহূর্তে তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। সম্রাট সৈন্যদেকে থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন, তুমি কেন হাসছিলে এবং তোমার চোখে অশ্রু এসেছিল কেন? ইসলামের সেনাপতি বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমার একটি মাত্র প্রাণ। যদি আমার একশ’ প্রাণ থাকতো, তাহলে আমি প্রত্যেকটি প্রাণ এভাবে আল্লাহর রাস্তায় বিসর্জন দিতাম।’ এ আশ্চর্যজনক জবাবে সম্রাট বিস্ময়াভিভূত হলো। সে ভাবল, এমন ব্যক্তির শাস্তি ‘মৃত্যু’ মোটেই ঠিক নয়, বরং তোঁকে বাঁচিয়ে রাখাই শ্রেয়।
সম্রাট তাঁকে বলল, ‘তুমি আমার মস্তক চুম্বন কর। আমি তোমাকে মুক্তি দেব।’ হজরত ইবনে হুজাইফা বললেন, ‘শুধু আমাকে নয়, যদি আমার সব সঙ্গীকে মুক্তি দাও, তবেই তোমার প্রস্তাবে রাজি।’ সম্রাট তাঁর প্রস্তাবে রাজি হলে সে সম্রাটের মস্তক চুম্বন করে নিজেসহ সবাইকে মুক্ত করে নিয়ে এলেন।
এ কাফেলা মদিনায় ফিরে এলে সমস্ত বর্ণনা হজরত ওমরকে অবহিত করলেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআনের আলোয় আলোকিত মুসলিম সেনাপতি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফার মস্তকে চুম্বন করলেন। এই হলো কুরআন ও ঈমানের অপূর্ব প্রেরণা। যা হিংস্র ও কঠোরতাকে পরাভূত করে একজন মানুষকে ঈমানের আলোয় আলোকিত করে তোলে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের আলোয় আলোকিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন অধ্যয়নের তাওফিক দান করুন। আমিন। (তথ্যসূত্র : তাফসিরে নুরুল কুরআন)
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর