আমি চাই দর্শকরা আমার জন্য অপেক্ষা করুক


প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

কাজী নাওশাবা আহমেদ। দেশের জনপ্রিয় মডেল ও একজন অভিনেত্রী। জন্ম ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে। শ্যামলীর আদাবরে বড় হয়েছেন। বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল কাজী সেলিম উদ্দিন এবং মা নাহিদ সেলিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। অভিনয়ের প্রতি ভালোলাগা থেকে জড়িয়ে ছিলেন মঞ্চ নাটকের সাথে। তিনি ২০১১ সালে মুকুল আহমেদের পরিচালনায় ‘সোনাটা’ (Sonata) নামের মঞ্চনাটকে প্রথম অভিনয় করেন। টেলিভিশনে নওশাবার প্রথম নাটকের নাম ‘ছোটবেলা বড়বেলা’। আর তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক জুয়েল মাহমুদ পরিচালিত ‘ললিতা’।

তবে নওশাবা তারও আগে রাতারাতি তারকায় পরিণত হয়েছিলেন বাংলালিংকের ‘লেডিস ফার্স্ট’ শিরোনামের বিজ্ঞাপন দিয়ে। তারপর তিনি কাজ করেছেন গ্রামীণফোন, বিবিসি সংলাপ, নেসক্যাফে, ম্যারিডিয়ান চিপস ও টেলিটকসহ আরো বেশ কিছু টিভিসিতে।

সাফল্যের রথে চড়ে নাম লিখিয়েছেন বড় পর্দাতেও। নওশাবা অমিত আশরাফের পরিচালনায় ‘উধাও’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। তারপর প্রতিরুদ্ধ ও আলগা নোঙরে কাজ করছেন তিনি। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে হঠাৎ মুখোমুখি হলেন জাগো নিউজের। জানালেন ক্যারিয়ার, সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও অভিনয় নিয়ে অনেক কথা-

জাগো নিউজ : কোথায় আছেন?
নওশাবা : এই মুহূর্তে বাসায় আছি। হঠাৎ করে শরীরটাতে জুত পাচ্ছি না। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। তাই বিশ্রাম নিচ্ছি।

জাগো নিউজ : ডাক্তার দেখাননি?
নওশাবা : আসলে তেমন কিছু নয়। দেখি, আজ-কালের মধ্যে সুস্থবোধ না করলে ডাক্তারের কাছে যাবো।

Nawshaba

জাগো নিউজ : তো আপনার ‘আলগা নোঙর’ চলচ্চিত্রের খবর কি? কবে নাগাদ হলে আসতে পারে?
নওশাবা : ছবিটির কাজ প্রায় শেষ। কিছুদিন আগে এ ছবির ডাবিং শেষ করেছি। তবে কয়েকটি দৃশ্যের কাজ এখনো বাকি আছে। সেজন্য কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম যেতে হবে। আর খুশির খবর হলো আলগা নোঙর ছবিটি আগামী ডিসেম্বরেই মুক্তি দিতে চান ছবিটির নির্মাতা ওয়াহিদ তারেক।

জাগো নিউজ : এ ছবিতে আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই....
নওশাবা : আলগা নোঙর ছবির গল্প ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেখানকার অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। যে মেয়েটি এতিম। তার দাদার কাছেই বড় হয়। মেয়েটির জীবনে বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় ও তাদের সাথে কাটানো সময়ের ঘটনাগুলো নিয়েই ছবির কাহিনী। চরিত্রটি অতি সাধারণ কিন্তু হৃদয়স্পর্শি। আশা করছি ভালো লাগবে সবার।

জাগো নিউজ : আর প্রতিরুদ্ধ’র কী খবর?
নওশাবা : নির্মাণ কাজ চলছে। এ ছবির সুনিতা চরিত্রটি আমার স্বপ্নের চরিত্র। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বলতে যা বোঝায় এখানে ঠিক সেভাবেই চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘উধাও’ ছবির নন গ্ল্যামারাস নওশাবা এখানে ভীষণ গ্ল্যামারাস একটি চরিত্রে অভিনয় করছে। সুনিতা চরিত্রটি ভীষণ সাদাসিধে, তার কোনো উচ্চাভিলাষ নেই। সে চায় স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার করতে। কিন্তু কোনো এক ঘটনায় তার স্বামী তাহের হয়ে ওঠে বিপ্লবী। বিপ্লবী তাহের ঘরছাড়া হলে সুনিতার সঙ্গে সখ্যতা হয় মেজর হায়দারের। দুই নায়কের বিপরীতে অভিনয় করার ব্যাপারটি কিন্তু বেশ উপভোগ্য। আশা করি দর্শকরাও এটি উপভোগ করবেন।

জাগো নিউজ : কবে নাগাদ এটি মুক্তি পাবে?
নওশাবা : এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বছর না হলেও আগামী বছরের শুরুতেই প্রেক্ষাগৃহে আসতে পারে ছবিটি।

Nawshaba 2
জাগো নিউজ :
সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে?
নওশাবা : এ মুহূর্তে আমি দু’টো নাটকে কাজ করছি। এরমধ্যে ইন্ডিয়ার একজন নাট্যকারের ‘ওয়ার্নিং’ নামে একটি নাটকে কাজ করছি। এটা মূলত দুই শহরের দু’জন মাফিয়াকে নিয়ে গল্প। পাশাপাশি আরটিভিতে প্রচারিত গোলাম সারোয়ার দুদুলের ‘কমেডি কলোনি’ নামে একটি নাটকে কাজ করছি। এটি সপ্তাহে চারদিন প্রচারিত হচ্ছে। তাছাড়া আরো কয়েকটা চলচ্চিত্রে কাজের ব্যাপারে কথা চলছে। তবে চূড়ান্ত কথাবার্তা না হলে এখনই কিছু জানাতে চাচ্ছি না।

জাগো নিউজ : তারমানে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছেন?
নওশাবা : দেখুন, সব অভিনয় শিল্পীই বড় পর্দায় নিয়মিত কাজ করার কথা ভাবেন। তেমনটা আমারও আছে। তবে মানহীন চলচ্চিত্রে কোনো সময়ই কাজ করতে চাইনা। আর নাটকে কাজ করছি চলচ্চিত্রের প্রস্তুতি হিসেবে। তবে নাটকের প্রতি আমার অন্যরকম ভালো লাগা আছে। কোনোসময় নাটক ছাড়ার ইচ্ছে নেই। নাটকের জন্যই আমি এখানে। নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত বলেই চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ আসছে। কিন্তু বড় পর্দাতে কালজয়ী কিছু চরিত্রে কাজ করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ : কিন্তু আজকাল তো টিভি নাটকে আপনার উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে। কেন বলুনতো?
নওশাবা : প্রথম কথা হচ্ছে আমি মানে বিশ্বাসী, পরিমাণে নয়। সেজন্য অন্যদের মত ভুরিভুরি সিরিয়াল কিংবা খন্ড নাটকে কাজ করি না। আমি সবসময় চাই দর্শকরা আমার জন্য অপেক্ষা করুক, আমি তাদের ভালো কাজ উপহার দেবো। একটা চরিত্রে অভিনয় করার আগে আমি সেই চরিত্রটি নিয়ে অনেক অনুশীলন করি, পর্দায় কিভাবে দর্শকরা আমাকে চায় ও পাবে সেটাও ভাবি। সেজন্য বস্তাপচা গল্পে কাজ না করে কম নাটকে অভিনয় করি।

Nawshaba

জাগো নিউজ : তাহলে নাটকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে কি কি বিষয় খেয়াল রাখেন?
নওশাবা : ভালো প্রশ্ন। প্রথমে খেয়াল রাখি আমি কোন চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছি। আগে যে চরিত্রটি নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছি সেটার সাথে যাতে কোনোভাবে না মিলে যায় সেটা খেয়াল রাখি। আবার বিশ্লেষণ করি আমার চরিত্রটি মেইন লিড না হলেও সেই চরিত্রের গভীরতা কতটুকু। সেজন্য ললিতা, ওয়ার্নিং এবং কমেডি কলোনিসহ প্রায় সব নাটকে প্রধান চরিত্র না হলেও আমার চরিত্রের ভ্যারিয়েশন আছে। অবশ্য এটা শুধু চরিত্রেই না; অভিনয়ে, বাচনভঙ্গিতে এবং কস্টিউমেও।

জাগো নিউজ : নিজের অভিনয়কে কিভাবে মূল্যায়ণ করেন?
নওশাবা : সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করি। ধরুন কেউ পরীক্ষা দিয়ে যখন হল থেকে বের হয় তখন কিন্তু সে ঠিকই বুঝতে পারে তার রেজাল্ট কি হবে। আমিও তেমনি কাজটা হাতে নিয়েই বুঝতে পারি এর গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে। প্রতিনিয়ত শিখার চেষ্টা করি কিভাবে আরো ভালো করা যায়। সবসময় ভাবি আজকের চেয়ে আমাকে আগামীতে আরো ভালো কিছু করতে হবে।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।