রাজন হত্যা : ১১ সাক্ষীর পুনরায় জেরা সম্পন্ন


প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ২১ অক্টোবর ২০১৫
ফাইল ছবি

সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় মহানগর হাকিম আদালতের দুই বিচারকসহ ১১ সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধার আদালতে তাদের পুনরায় জেরা শুরু করেন মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামের আইনজীবী আলী হায়দার ফারুক। বিকেল তিনটার দিকে সকল আসামিকে জেরা করা শেষ হয়।

আলোচিত এ মামলার সাক্ষীরা হলেন, সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম, দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল হক, রাজন হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার বরখাস্ত হওয়া (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, মামলার বাদী একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম, রাজনের বাবা আজিজুল রহমান ওরফে আলম, মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, স্থানীয় বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ, বেলাল আহমদ, কোরবান আলী ও আফতাব আহমদ।

রাজনের বাবার নিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মসরুর চৌধুরী শওকত জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের আদেশে ১১ সাক্ষীকে জেরা করার সুযোগ পান আসামি কামরুলের আইনজীবী। আসামি পক্ষ যে ১১ জনকে পুনরায় জেরা করতে চাইছিলেন বুধবার তাদেরকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হাজির করে। এর মধ্যে দুইজন বিচারকও ছিলেন। ১১ সাক্ষীর সবাইকে জেরা শেষ হয়েছে।

শওকত জানান, আগামী ২৫ অক্টোবর এই মামলায় ফৌজদারী ৩৪২ ধারা আসামি পরীক্ষা, সাফাই সাক্ষী থাকলে তা শোনা ও যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট শওকত জাগো নিউজকে বলেন, আসামি কামরুলের উপস্থিতিতে ১১ সাক্ষীকে জেরা করায় বাদী পক্ষেরই লাভ হয়েছে।

তিনি বলেন, কাঠগড়ায় থাকা কামরুলকে সাক্ষীরা সনাক্ত করেছেন। একজন (আপ্তাব আলী) সাক্ষী কামরুলকে সনাক্ত করে বলেছেন, ঘটনার দিন গাড়িতে করে রাজনের মরদেহ গুম করার সময় যে চারজন ছিলেন। তিনিসহ এলাকাবাসী মিলে যখন কামরুলের ভাই মুহিতকে জাপটে ধরেন তখন যে তিনজন দৌঁড়ে পালিয়ে যান, তাদের মধ্যে কামরুলও ছিলেন। তাকে তিনি চিনতে পেরেছেন।

কুমারগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আপ্তাব আলী আদালতকে আরও বলেন, কাঠগড়ায় থাকা কামরুল এবং সেদিন মরদেহ গুম করতে গিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়া কামরুল একই ব্যক্তি। তাকে আমরা চিনি, সৌদি আরব থাকতেন। মাঝে মাঝে দেশে আসতেন।

তবে বুধবারে জেরায় আসামি কামরুলের আইনজীবী আলী হায়দার ফারুক সাক্ষীদের জেরার এক পর্যায়ে আদালতে বলেন, রাজনকে হত্যার যে ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে, এটি নকল এবং ভিডিও চিত্রের কামরুল আর এই কামরুল একই ব্যক্তি নয়। কিন্তু সাক্ষীরা এর প্রতিবাদ করে বলেছেন এই কামরুল আর ভিডিও চিত্রের কামরুল এক ব্যক্তি। তারা তাকে চিনতে পেরেছেন।

এর আগে সৌদিতে পলাতক থাকা কামরুলকে ফিরিয়ে আনার পর তার আইনজীবী আলী হায়দার ফারুক গত মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারা অনুযায়ী ১৫ জন সাক্ষীকে পুনরায় জেরা করার আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করলে কামরুলের আইনজীবী ৪ জন কমিয়ে সুনির্দিষ্ট করে ১১ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করে তাদেরকে পুনরায় জেরা করার আবেদন জানান।

পরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে মহানগর জজ আকবর হোসেন মৃধা কামরুলের আইনজীবীর এ আবেদন মঞ্জুর করেন। বুধবার ওই ১১ সাক্ষীর পুনরায় জেরা করা হয়।

সাক্ষীদের জেরা উপলক্ষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মামলার প্রধান আসামি কামরুলসহ অন্যান্য আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।

সাক্ষীদের জেরাকালে আদালতের কাঠ গড়ায় উপস্থিত ছিলেন, মামলার প্রধান আসামি শহরতলির কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম ওরফে মুহিত ও আলী হায়দার ওরফে আলী, তাদের চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না, টুকেরবাজার ইউনিয়নের পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া, দুলাল আহমদ, আয়াজ আলী, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ফিরোজ মিয়া, আছমত আলী ওরফে আছমত উল্লাহ ও রুহুল আমিন ওরফে রুহেল।

গত ২২ সেপ্টেম্বর পলাতক আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে চার্জ গঠন করা হয়। আসামিদের মধ্যে কামরুলের ভাই শামীম ও পাভেল নামের দুজন পলাতক রয়েছেন।

গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ পলাতক ৩ আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমার মধ্যে পলাতকরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত বিচারিক কাজ শুরুর লক্ষ্যে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান।

গত ২৪ আগস্ট একই আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন ২৫ আগস্ট জালালাবাদ থানা পুলিশ ৩ পলাতক আসামিদের মালামাল ক্রোক করে।
    
গত ১৫ অক্টোবর বৃস্পতিবার বিকেল ২টা ৫৭ মিনিটে রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুলকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ঢাকা থেকে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে রাতে এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানায় রাখা হয়। শুক্রবার সেখান থেকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
    
ছামির মাহমুদ/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।