স্মরণকালের বিদ্যুৎ বিপর্যয়, ভোগান্তিতে সারাদেশ

রোকুনুজ্জামান সেলিম
রোকুনুজ্জামান সেলিম রোকুনুজ্জামান সেলিম , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০১৪

জাতীয় গ্রিডে কারিগরি সমস্যার কারণে এখনো (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) প্রায় পুরো দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক বিভ্রাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলেও তা ছিল আংশিক। শনিবারের মতো একযোগে সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়া আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৯টি, নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬টি ইউনিটই বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ভেড়ামায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে সবকটি ইউনিটে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে গ্রিডের সমস্যা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি কতৃপক্ষ।

এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান জানান, জরুরি মেরামত চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্র চালু হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় শাহজালাল বিমানবন্দর ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি বিভাগের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সময় (দুপুর পৌনে ১টা) আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয়টি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, জাতীয় গ্রিডের ত্রুটি সারাতে নিজস্ব প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। তবে কখন সবকটি ইউনিট চালু হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। একযোগে ৯টি ইউনিট বন্ধ হবার কারণে জাতীয় গ্রিডে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যার মধ্যে কর্তৃপক্ষ সারাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করলেও জাতীয় গ্রিডে আবারও বিপর্যয় দেখা দেয়। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশ এখনো (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) অন্ধকারেই রয়েছে।

ভোগান্তি
এদিকে স্বরণকালে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ভোগান্তিতে পড়েছে সারাদেশের মানুষ। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। কতক্ষণে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

রাজধানীসহ শহর এলাকায় সিএনজি স্টেশন গুলো বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ রেখেছে। ফলে স্টেশনগুলোতে গাড়ির যেমন চাপ বেড়েছে তেমনি গণপরিবহনেও চরম ভোগান্তির স্বীকার হয়েছে সাধারণ থেকে সর্বস্তরের মানুষ।

এদিকে বিদ্যুতের এই বিপর্যয়ে ঢাকা ওয়াসার প্রায় ৬০০ গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পথে। অল্প কিছু পানির পাম্পে জেনারেটর রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে সীমিত পর্যায়ে ঢাকা মহানগরে পানি সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। এছাড়া বাসাবাড়িতে একটু আলোর জন্য মোমবাতির দারস্থ হলেও সেখানেও ভোগান্তির শেষ নেই। ১০ টাকা মোমবাতি বাধ্য হয়ে ১৫-২০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ঢামেক এর একটি মুহুর্ত
দুঃখ প্রকাশ ও কমিটি গঠন
সারাদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনগণের দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারে (এনএলডিসি) উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন।

দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী হামিদ বলেন, এরই মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে। সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। গুরুত্ব বিবেচনা করে মেডিকেল ও বিমানবন্দরে ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

তবে প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) পর্যন্ত অন্ধকারেও রয়েছে পুরো বাংলাদেশ।

এদিকে সারাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আহমদে কায়কাউসকে কমিটির প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শনিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিহীন ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকা। ছবি-বিবিসি
নিরাপত্তা জোরদার
এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মাঝে অপ্রীতিকর ও অপরাধ প্রবণতা রোধে সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। রাতের বেলা টহল পুলিশ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব পালন করবে অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ মহাপরিদর্শক ( আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, কতক্ষণে বিদ্যুৎ আসবে তা যেহেতু নিশ্চিত নয়, তাই পুলিশকে সারাদেশে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও যেন চুরি-ছিনতাইসহ কোনো রকমের অপরাধ সংঘটিত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে জাতীয় গ্রিডে কারিগরি সমস্যার কারণে এখনো প্রায় পুরো দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাতের মধ্যেই ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।

এদিকে শনিবার সারাদেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়। কিন্তু ১২টার দিকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে ৭০ মেগাওয়াট, সিলেটে ভাড়াভিত্তিক ২০ মেগাওয়াট ও কাপ্তাইসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়। বিকেল চারটার দিকে বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় ৫০০ মেগাওয়াটে পৌঁছে। কিন্তু সোয়া চারটার দিকে জাতীয় গ্রিড আবার বন্ধ হয়ে যায়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।