জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনা: যে বিষয় গুলো জানা দরকার


প্রকাশিত: ০৬:১১ এএম, ১১ জুলাই ২০১৪

বিশ্বকাপ ফাইনালে রবিবার রাতে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা৷ দু`দল অবশ্য এর আগেও ফাইনালে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে৷ চলুন জানা যাক, বর্তমানে কোন দল কোন দিক দিয়ে এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে আছে৷

জার্মানি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে মূল ব্যবধানটি দলের গঠন নিয়ে৷ আর্জেন্টিনা বলতেই অনেকে বোঝেন মেসি এবং তাঁকে সহায়তাকারী কয়েকজন খেলোয়াড়৷ অন্যদিকে জার্মানি মানে হচ্ছে পুরো একটি ‘টিম`৷ তবে খেলার কৌশলের দিক দিয়ে আর্জেন্টিনা অনেকটাই জার্মানিকে অনুসরণ করতে সক্ষম৷ অবশ্য পর্তুগাল এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানি যে বিধ্বস্ত রূপ দেখিয়েছে, তেমনটা দেখাতে সক্ষম হয়নি মেসির দল৷

সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে দু`দলের অবস্থান:

গোলরক্ষক
বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে মানুয়েল নয়ারের পরিচিতি তৈরি হয়েছে কিন্তু ব্রাজিলেই৷ পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা জার্মান ফুটবলারদের একজন তিনি৷ শুধু শট রোখাই নয়, বৈচিত্রময় বিভিন্ন উপায়ে বল ঠেকানোতে বিশেষ পারদর্শী তিনি৷ আলজেরিয়ার বিপক্ষে খেলায় অনেকেই লক্ষ্য করেছেন নয়ারের এই গুণ৷

অন্যদিকে আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরো গত ফুটবল মৌসুমটা কাটিয়েছেন মোনাকো ক্লাবের ‘ব্যাকআপ` গোলরক্ষক হিসেবে৷ তবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুট আউটে চমক দেখিয়েছেন তিনি৷ দু`টি শট রুখে দিয়ে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন তিনি৷ তাসত্ত্বেও অবশ্য এই গোলরক্ষকের বিবেচনায় জার্মানিকে এগিয়ে রাখছেন ফুটবল বোদ্ধারাই৷

রক্ষণভাগ
জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লামকে মধ্যমাঠ দিয়ে সরিয়ে তাঁর প্রিয় জায়গা ‘সেন্টার ব্যাকে` নেয়ার পর থেকে আরো মজবুত হয়েছে জার্মানির রক্ষণভাগ৷ আলজেরিয়ার সঙ্গে খেলার পর এই সিদ্ধান্ত নেন কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ এছাড়া মাটস হুমেলসও জার্মানির রক্ষণভাগকে কার্যত অভেদ্য দূর্গে পরিনত করেছেন৷ ফলে ফ্রান্স বা ব্রাজিল বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি৷ তবে এই রক্ষণভাগ মেসিকে আটকাতে কতটা সক্ষম হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷

অন্যদিকে রক্ষণভাগে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে দুর্বল৷ চলতি বিশ্বকাপে অনেকের নজরে এসেছে সেটা৷ তবে এটাও সত্যি যে, নক আউট পর্বের খেলাগুলোতে কোনো গোলই হজম করেনি দলটি৷ মোটের উপর সেমিফাইনালে আরিয়ন রবেন এবং রবিন ফন পার্সিদেরকে সাধারণ খেলোয়াড়ে পরিনত করেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের দুই ফুটবলার পাবলো সাবালেটা এবং মার্টিন ডেমিকেলিস৷ বার্তা সংস্থা এপি-র ক্রীড়া সাংবাদিক মাটিয়াস কারেন এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখছেন জার্মানিকে৷

মধ্যমাঠ
জার্মানির সবচেয়ে বড় শক্তি মধ্যমাঠ৷ দলটির এই অংশের খেলোয়াড়রা একটা ‘টিম` হিসেবে চমৎকার খেলছেন৷ বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার এবং সামি খেদিরা প্রতিপক্ষকে মধ্যমাঠেই দুর্বল করে দেন আর টোনি ক্রোস এবং মেসুত ও্যজিল সহায়তা করেন আক্রমণে৷ ব্রাজিলকে চরম অপদস্থ করেছে জার্মানির মধ্যমাঠের খেলোয়াড়রা৷ এখন আর্জেন্টিনা তাঁদের কতটা সামলাতে পারবে বলা কঠিন৷

অন্যদিকে আর্জেন্টিনা আশা করছে আনহেল ডি মারিয়া ফাইনালের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলায় তাঁর অভাব ভালোভাবেই অনুভব করেছে দু`বার বিশ্বকাপ জয়ীরা৷ এছাড়া মিডফিল্ডার খাভিয়ার মাসকেরানো আর্জেন্টিনার বড় শক্তি৷ তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ীদের রুখতে তাঁকে ভালো ভূমিকা রাখতে হবে৷ সংবাদ সংস্থা এপি-র হিসেবে অবশ্য এখানেও এগিয়ে জার্মানি৷

আক্রমণভাগ
বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়টি জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোজে৷ এখন অবধি বিশ্বকাপে ১৬টি গোল করেছেন তিনি৷ তবে আর্জিন্টিনার আছে মেসি এবং আরো দু`জন ভালো আক্রমণভাগের খেলোয়াড়৷ মেসি নক আউট পর্বের শেষ তিনটি খেলায় গোল করতে না পারলেও, গ্রুপ পর্বে চারটি দর্শনীয় গোল করেছেন৷ সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ফিফার বিচারে চার বার বিশ্বসেরা ফুটবলার হয়েছেন লিওনেল মেসি৷ যদিও সেদলে স্যার্খিও আগুয়েরো এবং গনজালো হিগুয়াইনের মতো ফুটবলার রয়েছেন, তা সত্ত্বেও মেসিই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি৷ আর জিততে হলে তাঁকে হয় গোল করতে হবে কিংবা গোলের উপযোগী বল সতীর্থদের জন্য তৈরি করে দিতে হবে৷

ও হ্যাঁ, ক্লোজে ছাড়াও জার্মানির আরেক খেলোয়াড় কিন্তু আছেন গোল করার জন্য৷ তিনি টোমাস ম্যুলার৷ দু`টি বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে দশটি গোল করে ফেলেছেন তিনি৷ তবে এপি-র বিচারে আক্রমণভাবে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা৷

শেষ করার আগে ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান, বিশ্বকাপ ফাইনালে এর আগে দু`বার মুখোমুখি হয়েছে জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা৷ ১৯৮৬ সালে জার্মানিকে হারিয়ে কাপ জয় করে আর্জেন্টিনা, পরের ফাইনালেই অবশ্য প্রতিশোধ নেয় জার্মানরা৷ আর সর্বশেষ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের কাছে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা৷

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।