পিরোজপুরে সুপারির বাম্পার ফলন


প্রকাশিত: ০৪:২৭ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৫

পিরোজপুরে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সুপারি বিক্রি করে এবার ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে লবণাক্ততা ও অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুপারির ফলন দিন দিন কমছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি করায় দেশীয় সুপারির দাম কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

কৃষক ও সুপারি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশে সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পিরোজপুর সুপরিচিত। এক সময় দেশে উৎপাদিত সুপারির বড় অংশ দক্ষিণাঞ্চলের সদর উপজেলার চলিশা বাজারে বিকিকিনি হতো। বর্তমানে কাউখালী এলাকায় ব্যাপক হারে সুপারি উৎপাদিত হচ্ছে।

গাজিরহুলা, চৌরাস্তা, তালুকদারহাট, মিয়ারহাট, ধাবড়ী, নতুনবাজার, কেউন্দিয়া ও চলিশা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিক্রেতা ও চাষিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ১০/১২টি ছোট বড় হাটে সুপারি কেনা-বেচা হয়। এ সকল হাটে সারা বছরই সুপারি কেনা-বেচা চলে। তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং পাকা সুপারীর পিক মৌসুম শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত। এ সময় বেশির ভাগ সুপারি  ক্রয়-বিক্রয় হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে।

Pirojur-supari

জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে রাখে। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে এবং ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ২১ ঘার (২১০টি) এক কুড়ির কাঁচা সুপারির মূল্য শ্রেণি ভেদে ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া শুকনো সুপারি ১ মণ (৪০ কেজি) ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে।

ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানান, শুকনো সুপারি সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে বিক্রি শুরু হয়ে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে এবং শ্রাবণ মাস থেকে কাঁচা সুপারি অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে। এ সময়ে কৃষকদের হাতে কোনো টাকা-পয়সা থাকে না। তাছাড়া এ সময় কৃষকরা বোরো, গমসহ রবিশস্য চাষে ব্যস্ত থাকে। গাছের সুপারি বিক্রি করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কৃষি কাজে লাগাতে পারে এ টাকা।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পার সাতুরিয়ার মাহাবুব জানান, আমার মতো অনেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি থেকে সুপারি কিনে এনে হাটে বিক্রি করি।

Pirojur-supari-2

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে উপজেলায় কোটি কোটি টাকার সুপারি কেনা-বেচা হয়। কাউখালীর বড় সুপারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, কাউখালীর হাটে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়।

সুপারি চাষি সেলিম মিয়া, আলী হোসেন, সালাউদ্দিন, জসিম হাওলাদার, মীর নাসিরসহ অনেকে জানান, বিদেশ থেকে সুপারি আমদানি বন্ধ করে দেশের সুপারি চাষিদের বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চাষিদের পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বেড়েছে ফলন। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপারির উৎপাদন ও বিক্রি চলবে।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।