অসংক্রামক রোগব্যাধি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যর্থ!
অসংক্রামক রোগব্যাধি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগব্যাধি- ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও ক্রনিক যকৃতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু আক্রান্ত রোগীই নয়, মৃত্যুহারও বাড়ছে। কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। অসংক্রামক রোগব্যাধি প্রতিরোধ এখনও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি বৃটিশ মেডিকেল জার্নাল ল্যানচেটে অসংক্রামক রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণের দুর্বল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মোট ২৩টি দেশের অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ নির্ণয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে অসংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব নিরসনে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে বছরে যত রোগী মারা যায় তার অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির শতকরা ৬১ ভাগই অসংক্রামক।
আইসিডিডিআর’বিসহ ১১টি গবেষণা কেন্দ্র (গ্র্যান্ড সাউথ নামে একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক) উচ্চমাত্রার অসংক্রামক ব্যাধি নির্ণয়ের লক্ষ্যে পরিমাপক স্কোরকার্ড তৈরি করে। ২০১১ সালে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অসংক্রামক রোগব্যাধি প্রতিরোধে গৃহিত রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে এ স্কোরকার্ড তৈরি করা হয়।
স্যার জর্জ এলিনি জাতিসংঘ সেক্রেটারির বিশেষ দূত (ক্যারাবিয়ান অঞ্চলের এইচআইভি/এইডস বিষয়ক) বলেন, অসংক্রামক রোগব্যাধির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু দেশকে অনেক ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ এবং স্কোরকার্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কোথায় সমস্যা রয়েছে, কিভাবে তার উন্নতি সম্ভব তা খুব সহজেই নির্ণয় করতে পারবে।
নতুন এ গবেষণা স্কোর বোর্ডে দেখা গেছে, অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা গবেষকদের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মোটা হওয়ার প্রবণতাসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সঠিক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি চালু করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে অসংক্রামক রোগের ওষুধ পত্রের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের মাত্রা, উচ্চমাত্রায় চিনি ও মিষ্টি পানীয় ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের বদঅভ্যাস হ্রাসে নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরত্বারোপ করেন। সঠিক খাবার গ্রহণ, শারিরিক কসরত (ব্যায়াম) করার অভ্যাস গড়ে তুলতে একটি জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন।
আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী (ইনটেরিম হেড অব দি ক্রনিক নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ এট দ্য সেন্টার ফর ইক্যুয়িটি অ্যান্ড হেলথ সিষ্টেম) ড. আলেয়া নাহিদ বলেন, বাংলাদেশ অসংক্রামক রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১৬-২১) মাল্টি সেক্টরাল পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
পরিকল্পনা অনুসারে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী বাছাই, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর গুরত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবনপদ্ধতি গড়ে তোলার ওপরও গুরত্বারোপ করা হয় বলে জানান তিনি।
এমইউ/আরএস/এএইচ/পিআর