মানবপাচারে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জড়িত
বিমানবন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র জাল ভিসা তৈরি ও অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে অভিবাসী প্রেরণ করে আসছে। চক্রটি এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির লোকজনকে কৌশলে প্রভাবিত করে পাসপোর্ট ও জাল ভিসা সরবরাহ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সোমবার দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
এর আগে রোববার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, র্যাব-৩, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন উত্তর কমলাপুর ইনসাফ হোটেলে ২১১ নং কক্ষে ২ জন মানবপাচারকারী অবস্থান করছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উক্ত স্থান থেকে মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য মতিন মিয়া (৪৭) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবু (৪৫)কে বিভিন্ন দেশের ৫১টি জাল ভিসাসহ গ্রেফতার করে।
পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পল্টন থানাধীন ৪৭ নং নয়া পল্টন কোরবান আলীর চায়ের দোকান থেকে মো. আবুল হোসেন (৮১), মো. নূর ইসলাম (৩০)কে ৩০টি লিবিয়ার জাল ভিসাসহ গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. রেজাউল করিম সোহেল (৩১) মো. তৈয়ব আলী (৪৮), মো. বেল্লাল হোসেন (৩৬) ও মো. আবুল হোসেন (৩৬)কে ৫৯৫টি বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার ভোরে রেজাউল করিম সোহেলের বাসা ও পল্টনস্থ বন্ধু আবাসিক ভবনের নীচ তলার পায়েল কম্পিউটার অ্যান্ড গ্রাফিক্স এ তল্লাশি চালিয়ে সর্বমোট ৬৩৫টি বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট, ২২৬৫টি বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা, ৯২৯টি জাল ভিসার স্টিকার, ৫১টি লিবিয়া ভিসা হলোগ্রাম, ৪১১টি বাংলাদেশি পাসপোর্টের ভিসার পাতা, ১২টি ভিসা অ্যানডোর্সমেন্ট, ৮৭টি অ্যানডোর্সমেন্ট।
এছাড়া ৪টি নেপালের ট্যুরিস্ট জাল ভিসা, ৫২টি বিভিন্ন দেশে ভিসার ট্রেস্ট পেপার, ২৫ বান্ডেল ভিসার তৈরির পেপার, ২ পাতা মোজাম্বিকের ভিসার হলোগ্রাম, ৫ সেট ভিসা আবেদন ফরম, ১২ টি ভারতের ভিসা আবেদন ফরম, ২৫টি ভারতে ই-টোকেন পেপার, ১৪২টি নেপালের এ্যারাইভাল স্টিকার, ১৩টি ধারাবাহিক ডিস্চর্জ সনদ (কভার), ৩২৫টি মেডিক্যাল ফিডকার্ড, ১০৬টি মেডিকেল সার্টিফিকেট, ৩টি ডিসচার্জ সনদ বস্নাংক, ১৯টি ধারাবাহিক ডিসচার্জ সনদ, ২টি বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড, ৪১০টি ভিসা পিন পোপা, ৪টি হলোগ্রাম ডাইস।
৬৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের পাতা, ৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা কার্ড, ৭৯টি বিভিন্ন ব্যাংকের সিল, ১০৮টি বিভিন্ন দেমের ভিসা ইমিগ্রেশন এবং এয়ারপোর্ট সিল, ১টি বিভিন্ন দেশের ভিসা চেকিং লাইট, ১টি বিভিন্ন দেশের ভিসার স্ট্যাম্প, ২টি ডায়েরিতে বিভিন্ন দেশের ভিসার নমুনা, ০১ প্যাকেট লিবিয়া স্টিকার ফয়েল, ১টি ডলার অ্যানডোর্স মেশিন, ২টি সিলের আউটপুট পেপার, ৫টি ভিসার আউটপুট পেপার।
১৭টি বিমানের টিকিট কভার, ২টি স্কিন বোর্ড, ১টি লোহার তৈরি কাটার মেশিন, ৭টি বড় ছোট ভিসার ডাইস, ১৬টি ভিসা লেখার ছোট বড় স্কিন, ১ বান্ডেল ফয়েল স্টিকার পেপার, ৩০টি ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট কোম্পানির কার্ড, ২১টি স্ট্যাম্প প্যাড, ১২টি অটো সিল, ২টি ট্রেড লাইসেন্স বই, কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রাইভেটকার (রেজি নং-চট্রঃ মেট্রো-ঘ-১১-১৮৮০) এবং ০৪টি গাড়ীর কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে জাল ভিসা তৈরি করে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে অভিবাসী প্রেরণ করে আসছে। চক্রটি তাদের দালাল/এজেন্ট এর মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা/উপজেলা হতে নিম্নবিত্ত ও দ্ররিদ্র শ্রেণির লোকজনকে কৌশলে প্রভাবিত করে প্রবাসে উন্নত জীবন যাপনের আশ্বাস দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে জাল ভিসা তৈরি করে সরবরাহ করে।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের অবৈধপথে বিদেশে প্রেরণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও লিবিয়াতে লোক পাঠিয়ে থাকে। চক্রের কিছু সদস্য আকাশপথে বিমানবন্দরে কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিদেশে মানবপাচার করে থাকে।
স্থলপথেও ভারত ও নেপাল হয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করে থাকে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
জেইউ/এসকেডি/পিআর