ভোগান্তি নিয়েই ছুটছে মানুষ
ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। কেনাকাটা, কর্মস্থল থেকে বিদায় নিয়ে শেষ বেলায় গ্রামের বাড়ি ফিরতে যারা বেরিয়েছেন তারা পড়েছেন মহাবিপদে। একেতো রাস্তায় যানজটের কারণে সিডিউলের বাসই চলছে না, তার উপর নতুন কোনো যানবাহন না পাওয়ার চরম কষ্ট নিয়ে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাসের অপক্ষোয় রয়েছেন হাজারো যাত্রী।
তবুও ছুটছে মানুষ। বৃষ্টি, বাসের সিডিউল বিপর্যয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারের ভেতরে ঠাঁসাঠাসি অবস্থার পরও ছুটছে মানুষ। প্রিয়জন, কাছের মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির এই সুযোগটা যেন কেউ হাত ছাড়া করতে চাইছে না ।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন গাড়ির চাপ, বিরূপ আবহাওয়া, দুর্ঘটনা আর কোরবানির পশুবাহী ট্রাক বিকল হওয়ায় উত্তরের পথে দীর্ঘ যানজট লেগেছে। বাসের সিডিউলেও এসেছে পরিবর্তন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পুলিশ।
‘রাজধানী থেকে উত্তরের পথে দীর্ঘ যানজট ভোগান্তিতে ফেলেছে হাজার হাজার মানুষকে। বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরক্তি নিয়ে বসে থাকা ছাড়াও কোনো উপায়ও নেই। দেখার কেউ নেই। সমাধানেরও যেন কেউ নেই। `
কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় যেতে রাতে বের হন তিনি। কল্যাণপুর থেকে তার গাড়ি ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাসের কোনো খবর নেই। ঈদ এবার রাস্তাতেই করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে যেতে বুধবার রাতে বের হন প্রথম আলো’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা অন্তু। নাবিল পরিবহনের বাস ছাড়ার কথা বুধবার রাত ৯টায় তবে বাস ছাড়ে রাত আড়াইটায় এখন কালিয়াকৈর এলাকায় যানজটে আটকা আছেন তিনি ।
তিনি জানান, রাতে সঠিক সময়ে বাস না আসায় কাউন্টারে যাত্রীদের হোগলা পাতার চাটাই দিয়েছিল বাস কর্তৃপক্ষ। সেখানে বসেই বাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম জানান, গাইবান্ধার বাসে টিকিট মেলেনি। যে কোনো একটা বাসে উঠবো ভেবে বেরিয়েছি পথে পথে ঘুরেছি। কল্যাণপুরে বাস না পাওয়ায় কমলাপুর রেল স্টেশনে যাই। কিন্তু সেখানেও ট্রেনে উঠতে পারি নি। আবার ফিরে এসেছি গাবতলীতে। সারাটা রাত ঘুরে শেষমেশ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় লোকাল বাসে উঠার সুযোগ পাই।
বগুড়ার যাত্রী বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবেল হোসেন মোবাইল ফোনে জাগো নিউজকে জানান, গত রাতে টিআর ট্রাভেলস এর বাস ছাড়ার সময় ছিল রাত ১২টায়। কিন্তু সে বাস ছাড়ে রাত আড়াইটায়। সেই রাত আড়াইটা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর আসতে পেরেছি।
গাবতলী ছেড়ে আমিন বাজারে পেরুতেই যানজটে আটকা পড়েছেন মাহাতাব উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, যানজটে আটকে পড়া হাজার হাজার পরিবহনের লাখ লাখ যাত্রী দুর্ভোগে মধ্যে আছেন। নারী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীরা বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। ভ্যাপসা গরম, খাবার পানির অভাব ও টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় ঈদা আনন্দ নিরানন্দে রুপ নিয়েছে।
এসআর বাসের গাতবলীর ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, আমিন বাজার পার হতেই দেড় দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। বাসের সিডিউলে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টার পরিবর্তন এসেছে। সিডিউলের বাসই গন্তব্যে না যাওয়ায় নতুন করে বাস ও অতিরিক্ত বাস ছাড়ার সাহস পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জাগো নিউজের স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সাভার, চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত গাড়ি চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে আছে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইলের গোড়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কে গাড়ি দাঁড়িয়ে অাছে। কালিয়াকৈর নবীনগর মহাসড়কে চন্দ্রা থেকে নবীনগর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার সড়কের চিত্র একই।
পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান জানান, বেসামাল পরিস্থিতি। রাস্তায় গাড়ি বেশি। দুর্ঘটনা কিংবা একটা যানবাহন বিকল হলে এর প্রভাব পড়ে যায় দ্রুত। মহাসড়কে এমনটাই হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে যানজট কমানোর। এজন্য তিনি যাত্রী ও বাস চালকেদের সহযোগীতা কামনা করেন।
# ঘণ্টায় আধা কিলোমিটারও চলছে না গাড়ি
জেইউ/এসকেডি/এমএস