রামপালে প্রধান শিক্ষিকাকে অপদস্থ করলেন এটিও
রামপালে এক সহকারী শিক্ষা অফিসার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে অপদস্থ করেছেন বলে জানা গেছে। এতে তিনি স্কুল ভবনেই জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে ওই শিক্ষিকা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মানসিক চাপের ফলে তিনি স্টোকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার বিকেলে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার গাববুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ ওই দিন স্কুলে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও প্রধান শিক্ষিকাকে ৫ শ টাকার জন্য কোনো বকাঝকা করেনি বলে দাবি করেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষিকা অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। মায়ের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় পাশেই বসে আছেন তার ছেলে শেখ আরেফিন তানভীর।
তিনি জানান, মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে তিনি খুলনা থেকে বাগেরহাটে চলে এসেছেন। সামান্য ৫ শ টাকার জন্য তার মাকে স্কুলের অন্য শিক্ষিক শিক্ষিকার সামনে অপমান করায় তিনি স্টোকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা বিষয়টি জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক সমাদ্দারকে জানিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, রামপালের গাববুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু দিন আগে পিএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য ১৫ শ টাকা ছিল। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় পরীক্ষার উপকরণ কিনতে সব টাকাই খরচ করে বিদ্যায়লয়ের শিক্ষকবৃন্দ। বিষয়টি নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না রামপালের সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. নুর মোহাম্মদ। তিনি ওই ১৫শ টাকার মধ্য থেকে তার জন্য ১ হাজার টাকা রেখে বাকী ৫ শ টাকা দিয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার উপকরণ কিনবেন এমন দাবি ছিল তার। কয়েকদিন আগে প্রধান শিক্ষিকা ছুটি কাটিয়ে স্কুলে যোগদান করায় এটিও নুর মোহাম্মদ ওই টাকার জন্য তাকে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ৫শ টাকা প্রধান শিক্ষকের কাছে দাবি করে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হন।
রোববার এটিও নুর মোহাম্মদ গাববুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫শ টাকা না পাওয়ায় গালমন্দ করায় বিষয়টি বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানান প্রধান শিক্ষিকার পরিবার। এতে পরদিন সোমবার ক্ষিপ্ত হয়ে নুর মোহাম্মদ প্রধান শিক্ষিকাকে এক হাত দেখাতে গামবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটে যান। সেখানে সহকারী অন্য শিক্ষিক শিক্ষিকাদের সামনে একদফা বকাঝকা ও তার বিরুদ্ধে ডিপিওকে নালিশ করার সাহস দেখানোর জন্য গালমন্ধ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে এটিও নুর মোহাম্মদ স্কুল থেকে চলে যায়। পরে দ্বিতীয় দফায় স্কুল ছুটি হওয়ার কিছু আগে বিকেলে আবারো ওই স্কুলে হাজির হন নুর মোহাম্মদ। এবার এটিওর রাগের বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে প্রধান শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্কুলের মধ্যেই শিক্ষিকা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এটিও নুর মোহাম্মদ।
পরে অন্য সহকারী শিক্ষকবৃন্দ প্রধান শিক্ষিাকা শামীমাকে ভ্যানে করে রামপালের ঝনঝনিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় তার অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই শিক্ষিকার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি স্টোকে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. নুর মোহাম্মদের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি কোনো আশোভন আচরণ করেননি। সোমবার তিনি গাববুনিয়া সরকারি স্কুলে গিয়েছিলেন স্বীকার করে জানান ওই শিক্ষিকা গ্যাস্টিকের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্য কিছু নয়। ৫ শ টাকার জন্য শিক্ষিকাকে তিনি অশোভন উক্তি করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গাববুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মোড়ল শামিমুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ওই শিক্ষকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শওকত আলী বাবু/এসএস/আরআইপি