চরিত্রবান সন্তান-সন্তুতি লাভে পিতা-মাতার দায়িত্ব
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে দান করেছেন অগণিত নিআ`মাত। এ সবের মধ্যে সন্তান-সন্তুতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিআ`মত। আল্লামা আলুসি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ধন-সম্পদ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর উপায় আর সন্তান-সন্তুতি হচ্ছে বংশ তথা মানব প্রজাতি রক্ষার মাধ্যম। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় সন্তানকর্তৃক অহরহ পিতা-মাতার নিযাতনের ঘটনা। যা থেকে পরিত্রাণ চায় মানবতা। সন্তান-সন্তুতি যাতে প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ নিআ`মাত হিসেবে বেড়ে ওঠে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-
সন্তান জন্মদান পরবর্তী দায়িত্বসমূহ-
ইসলাম সন্তান জন্মদানের পর নবজাতকের জন্য কতিপয় কাজকে আবশ্যকীয় করে দিয়েছেন।
১) প্রসব পরবর্তীতে উত্তমরুপে গোসল দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা। শীতকাল হলে সাবধানতা অবলম্বন করা।
২) গোসলের পর নবজাতকের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইক্বামাত দেয়া, হাদিসের এসেছে-
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صلعم اَذَّنَ فِي اُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ يَوْمَ وُلِدَ وَ اَقَامَ فِي اُذُنِهِ الْيُسْري- অর্থাৎ হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হাসান ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মগ্রহণের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইক্বামাত দিয়েছিলেন। (বায়হাকি) যা তাকে অনেক রোগ থেকে হেফাজত করে।
আজান ও ইক্বামাত দেয়ার কারণ ও ফতিলত-
আজান ও ইক্বামাতের মাধ্যমে নবজাতকের কানে প্রথমেই আল্লাহর পবিত্র নাম পৌঁছে দেয়া। যাতে এর প্রভাবে তার ঈমানের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে যায় এবং শয়তানের ভয়াবহ আক্রমন থেকে যেন শিশু নিরাপদ থাকে।
৩) তাহনিক তথা নবাজাতককে মিষ্টিমুখ করানো। তাহনিক করা সুন্নাত। তাহনিক অর্থ হলো খেজুর চিবিয়ে সেই চর্বিত খেজুর নবজাতকের মুখে দেয়া। যাতে এর কিছু রস নবজাতকের পেটে যায়। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-
عَنْ اَبِي مُوْسي قَالَ وَلَدَلِي غُلَامٌ فَاَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلعم فَسَمَّاهُ اِبْرَاهِيْمَ فَحَنَّكَهُ بِتَمَرَةٍ وَدَعَالَهُ بِالْبَرَكَةِ وَ دَفَعَهُ اِلَيَّ - অর্থাৎ হজরত আবু মুসা আশআ`রি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে পেশ করলাম। তিনি তার নাম রাখলে ইবরাহিম আর খেজুর দ্বারা তাকে মিষ্টিমুখ করালেন ও তার জন্য বকতের দোয়া করে তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। (বুখারি)
৪) আকিকা করা ও নাম রাখা- সম্ভভ হলে ৭দিনের মাথায় আকিকা করা, তা নাহলে ১৪ দিনের মাথায়, তা নাহলে ২১দিনের মাথায় আকিকা করা। তাও সম্ভব না হলে সময় সুযোগ করে আকিকা আদায় করা। কারণ আকিকা একটি মুস্তাহাব আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭মদিনেই আকিকা করেছেন।
৫) সপ্তমদিনেরই মাথা মুণ্ডন করা এবং চুল মেপে সমপরিমান অর্থ সাদকা করা। মণ্ডিত মস্তকে সুগন্ধি মাখা।
৬) মায়ের বুকের দুধ পূর্ণ দুই বছর পান করানো
৭) স্নেহ, মমতা ও ভালবাসায় লালন-পালন ও ভরণপোষণ দেয়া
৮) কথা বলা শুরু করলে প্রথমেই কালিমা-ই-তৈয়্যেবা শিক্ষা দেয়া।
৯) পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন গঠণে লক্ষ্য রাখা।
১০) উপযুক্ত বয়সে খাৎনা করানো। দশটি আমল নবী ও রাসূলদের সুন্নাত- ক) খাৎনা, খ) আতর ব্যবহার, গ) মিসওয়াক করা, ঘ) বিবাহ করা ইত্যাদি। (তিরমিজি)
১১) উন্নত চরিত্র গঠনে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। সন্তানের উত্তম ও নৈতিকতা পূর্ণ শিক্ষা না দেয়া সন্তান হত্যার শামিল। কুরআনে এসেছে- أَوَ مَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ অর্থাৎ আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে-সেখান থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
হাদিসের এসেছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সন্তানকে আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া এক সা` পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী সাদাকা করা থেকে উত্তম। (তিরমিজি, মিশকাত)
পরিশেষে...
একটি শিশুর সুন্দর ব্যক্তিজীবন কিভাবে গড়া যায় তা কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। যে পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়, আল্লাহ সেই পিতা-মাতার আত্মাকে সন্তান-সন্তুতির আচার-আচরণ দ্বারা শান্তি করে দেন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বনিআদমকে সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে উত্তম চরিত্রবান সন্তান সমাজকে দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর