সমুদ্র আমাদের সব কেড়ে নিলো


প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০১৫

আর কিছু রইলো না, সমুদ্র আমাদের সব কেড়ে নিলো। ঋণের টাকাও শোধ করতে পারেনি। এখন আমরা কোথায় যাবো। এমন দিশেহারা ও কান্নাজনিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত গণি খালাশীর স্ত্রী তানজিলা বেগম।

গত বৃহস্পতিবার নৌকাডুবির ওই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈরের চাচা গণি খালাশী ও ভাতিজা কামরুল খালাশীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় একই উপজেলার আরো তিনজনকে জীবিত উদ্ধার হয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের হাকিম উদ্দিন খালাশীর ছেলে গণি খালাশী (৪১) ইসলামি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক বছর চার মাস আগে লিবিয়া যায়। এর কিছুদিন পর তার বড় ভাই ফজল খালাশীর ছেলে কামরুল খালাশীও (১৯) লিবিয়া যায়। এরপর তারা সেখানে একত্রে থাকা শুরু করেন।

কয়েকদিন আগে গণি খালাশীর কাছে থাকা প্রায় আড়াই লাখ টাকা ওই দেশের দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর তিনি ইতালি যাবার চিন্তা করে। পরবর্তীতে ভাতিজা কামরুলসহ গণি খালাশী বৃহস্পতিবার নৌকাযোগে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হন। গভীর সমুদ্রে প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে ওই নৌকাটি ডুবে যায়।

এ সময় নৌকা ডুবে গেলে গণি খালাশী ও কামরুল খালাশী মারা যায়। এছাড়াও নৌকায় থাকা অপর তিনজন একই গ্রামের ছলেমান খালাশীর ছেলে নিলু খালাশী (৩২), ধনী মুন্সির ছেলে উজ্জ্বল মুন্সি (২৭) ও পাশের গ্রাম তাতীকান্দির তৈয়ব আলী মেম্বরের ছেলে শরীফ হোসেন (৩৫) বেঁচে যায়। এর মধ্যে নিলু খালাশীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে লিবিয়ার একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তানজিলা বেগম বলেন, ইসলামি ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ করে লিবিয়াতে গিয়েছিলো। সেখানের অবস্থা ভালো না থাকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা। কিন্তু সমুদ্র আমাদের সব কেড়ে নিলো।

এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি মরদেহ দুইটি যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যাতে করে এই বাচ্চাগুলো ওর বাবার কবরটা দেখতে পায়।

নিহত কামরুলের বড় চাচি আলেয়া বেগম বলেন, কামরুল খালাশী পড়াশুনায় ভালো ছিলো। এইচএসসি পরীক্ষায় চার পয়েন্ট পেয়েছিলো। গত বছর রেজাল্টে পেয়েই সে লিবিয়াতে গিয়েছিলো। ওর বাবা-মা হজ এ গিয়েছে। তারা এখনও এ খবর পাইনি। তাদের জানানো হয়নি।

কামরুলের চাচাতে বোন সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা তাদের মৃত্যু খবর পেয়েছি। এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নিলু খালাশী, উজ্জ্বল মুন্সি ও শরীফ মোবাইল ফোনে আমাদের জানিয়েছে। এখন শুধু মরদেহ ফিরে আসার অপেক্ষা।

উদ্ধার হওয়া শরীফের বাবা তৈয়ব আলী মেম্বর বলেন, মোবাইল ফোনে আমার ছেলে শরীফের সঙ্গে কথা হয়েছে। শরীফ ভালো আছে। তবে ও জানিয়েছে গণি খালাশী ও তার ভাইয়ের ছেলে কামরুল খালাশী মারা গেছেন।

এ ব্যাপারে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, `ঘটনার কথা শুনিনি। খোঁজ খবর নিচ্ছি। খোঁজ খবর নেয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ কে এম নাসিরুল হক/এআরএ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।