পবিত্র ঈদুল আযহা আজ
আজ মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহা। রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। নাড়ীর টানে ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছেড়েছেন রেকর্ডসংখ্যক মানুষ। ফলে রাজধানী এখন প্রায় ফাঁকা। রবিবার থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনদিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।
আল্লাহ পাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং তাঁরই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই অনন্য ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়।
ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো- নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরই নামে জবেহ করা। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে জবাই করা পশুর মাংস বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, কেবল নিয়ত ছাড়া। ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কু-প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। জাতীয় কবির ভাষায় : মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই..’।
পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিম ময়দানে নামাজ আদায়ের পর যার যা সাধ্য ও পছন্দ সেই অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আরবি ’আজহা ’এবং ’কোরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া ইত্যাদি।
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন একদিন কোরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণির প্রাণী কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর ৩ ভাগের ১ ভাগ গরীব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেয়া যায়।
কোরবানির ইতিহাস অতি প্রাচীন। সৃষ্টির প্রথম মানব আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি করেন। মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.)কে তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। হজরত ইব্রাহীম (আ.) ৮৫ বছর বয়সে হজরত ইসমাইল (আ.)কে পান। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেওয়া এক কঠিন পরীক্ষা; কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ পুত্র ইসমাইল (আ.)ও নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। একপর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন।
আল কোরআনে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন, হে বৎস্য! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কী? সে বললো, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম (আ.) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক জন্তু।’’ হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানি করে আসছেন। তারই নিদর্শনস্বরূপ প্রতিবছর হজ পালনকারীরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।