দোয়াই হচ্ছে ইবাদতের মূল উৎস


প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৫

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব, যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ -সুরা মু’মিন : আয়াত ৬০।

দোয়া ইবাদতের অংশ। আল্লাহ তাআলা ইহাকে ইবাদত হিসেবে অভিহীত করেছেন এবং সাহায্য লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন। মানুষ যখন বুঝতে পারে যে, বস্তুজগতের উপায় উপকরণ তার কোনো সমস্যা, কষ্ট ও চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয় বা যথেষ্ট বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, তখন কোনো অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী সত্তার কাছে ধরনা দেয়া অপরিহার্য মনে করে। তখনই মানুষ দোয়া করে এবং না দেখেই সে সত্তাকে ডাকে, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি জায়গায় এবং সর্বাবস্থায় ডাকে। একাকী নির্জনে ডাকে, শুধু উচ্চস্বরেই নয়, চুপে চুপেও ডাকে এবং মনে মনেও তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তা শুধু মাত্র একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতেই জন্ম নেয়।

জেনে নিই, কি সেই বিশ্বাস?
সেই সত্তা তাকে সর্বত্র দেখছেন, তার মনের কথা, আবেগ ও অনভূতি শুনছেন। তিনি এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী যে, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী যেখানেই অবস্থান করুন না কেন তিনি তাকে সাহায্য করতে পারেন, তার বিপর্যস্ত ভাগ্যকে পুনরায় তৈরি করতে পারেন।

অত্র আয়াতে মানুষের উপলব্দি
আল্লাহ তাআলার এই অনুগ্রহ ও দয়ার ওপর আমাদের জীবনটাই কুরবানি করা উচিত। যে,
ক. এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার নিকট প্রাথনা করার জন্য আহ্বান করেছেন এবং প্রার্থনা আল্লাহ তাআলা কবুল (গ্রহণ) করার ওয়াদাও করেছেন।
খ. হযরত সুফিয়ান সাওরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আল্লাহর নিকট ঐ বান্দাই সবচেয়ে বেশি প্রিয় যে খুব বেশি প্রাথনা করে; আর ঐ বান্দা খুবই অপ্রিয় ও মন্দ যে তার নিকট সাহায্য চায় না।
গ. তাইতো জনৈক কবি বলেছেন-
‘আল্লাহর মহত্ম্য এই যে, যদি তুমি আল্লাহর কাছে চাওয়া পরিত্যাগ কর, তবে তিনি অসন্তুষ্ট হন; পক্ষান্তরে আদাম সন্তানের কাছে যখন কিছু চাওয়া হয়, তখন সে অসন্তুষ্ট হয়।’
ঘ. দোয়ার এ তাৎপর্য অনুধাবন করার পর মানুষের জন্য একথা বুঝা আর কঠিন থাকে না যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া অন্য  কাউকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করেন সে প্রকৃতই নিরেট নির্ভেজাল এবং স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয়। যা  হয়ে থাকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কারণ, যে সব গুণাবলী শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট তা আল্লাহ ব্যতিত অন্য সত্তার মধ্যেও আছে বলে সে বিশ্বাস করে।
জ. হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনে, যে ব্যক্তি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না, তিনি তার প্রতি রাগান্বিত হন। -মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি।
২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দোয়াই হচ্ছে ইবাদতের সারবস্তু। -তিরমিজি।
৩. হজরত নুমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দোয়াই ইবাদত। অতপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন- তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। -মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইবনে আবি হাতেম, ইবনে জারির।

এই আয়াতে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
১. দু’টি ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়
ক. মানুষ মনে করে আল্লাহ তাকদিরের ভালো মন্দ একবারেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এতে রদবদল করার ক্ষমতা আল্লাহ পাকের নাই। (নাউজুবিল্লাহ) কিন্তু আল্লাহর এ আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী আল্লাহ বান্দার চাওয়া-পাওয়ার জন্য তাকদিরের ভালে ও মন্দের পরিবর্তন করতে পারেন।
খ. দোয়া কবুল হোক বা না হোক, বান্দা তার প্রভুর সামনে নিজের অক্ষমতা, অযোগ্যতা, অভাব ও প্রয়োজন পেশ করে প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয় এবং নিজের দাসত্ব ও অক্ষমতা স্বীকার করে নেয়। এ দাসত্বের স্বীকৃতিই ইবাদতের মূল প্রাণসত্তা। এর ফায়দা সে পাবেই পাবে।
২. হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একমাত্র দোয়া ছাড়া আর কোনো কিছুতেই তাকদিরের পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই।
৩. বহু সংখ্যক সাহাবী থেকে একটি হাদিস এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মুসলমান যখনই কোনো দোয়া করে তা যদি কোনো গুনাহের কাজ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের না হয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি অবস্থায় কবুল করে থাকেন।
ক. হয় তার প্রার্থিত জিনিস এই দুনিয়াতেই কবুল করা হয় অথবা
খ. আখিরাতের প্রতিদান দেয়ার জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয় অথবা
গ. তার ওপর ঐ পর্যায়ের বা পরিমাণ বিপদ-আপদ আসা বন্ধ করা হয়।-তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ।
৪. দোয়া করার সময়, হে আল্লাহ তুমি চাইলে মাপ কর, রহম কর, দান কর এই রকম না বলে বরং নির্দিষ্ট করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে হবে, হে আল্লাহ! আমার ওমুক প্রয়োজন পূরণ করুন।
৫. দোয়া কবুল হয় না ভেবে অস্থির হওয়া যাবে না বরং অস্থির না হয়ে ধীরতা অবলম্বন করা।
৬. এমনকি ছোট-বড় থেকে শুরু করে অতি সুক্ষ্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও আল্লাহর সাহায্য কামনা করা বা ডাকা।

আয়াত পরিচিতি-
সূরা : মুমিন
সূরা নং : ৪০
পারা : ২৪
নাজিলের স্থান : মাক্কাতুল মুকাররামা
আয়াত নং : ৬০
বিষয় বস্তু : আল্লাহর ক্ষমতা তথা তাওহিদ বা একত্ববাদের শিক্ষা

তাওহিদের ওপর থেকে অন্যের নিকট কোনো কিছু চাওয়া থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভ করা। যা ব্যতিত মানুষের কোন উপায় নেই, আর দোয়াই হল আল্লাহর নৈকট্যলাভের বিশেষ বাহন ও মাধ্যম। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, প্রত্যাশা ও সাহায্য কামনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। এ দ্বারা মানুষ তার প্রতিপালকের ইবাদত করে, উদ্দেশ্যে লাভে সফল হয়, তার সন্তুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং আমাদের দৈনন্দিন জীবন, নামাজ-রোজা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিপদ-মুসিবত, সৎ চাওয়া-পাওয়া তথা আমলি জিন্দেগিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজে আল্লাহর ধরনা ধরাই মুমিন জীবনের কাম্য। আল্লাহ আমাদের তাঁর শেখানো ভাষা ও নিয়মে, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণে লাভে আশ্রয় প্রার্থণা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।