পঞ্চগড়ে শ্রাবণে চৈত্রের দাবদাহ : বিপাকে আমন চাষি


প্রকাশিত: ০৪:৩৩ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৫

দেশের বিভিন্ন জেলায় যখন বন্যার পানি থইথই। পানিবন্দি লাখো মানুষ। তখন বৃষ্টির অভাবে তীব্র খড়তাপে পুড়ছে পঞ্চগড়। সপ্তাহ জুড়ে জেলার কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। শ্রাবণের অর্ধেক দিন কেটে গেলেও চারদিক চলছে চৈত্রের প্রচণ্ড দাবদাহ। গত এক সপ্তাহে গড়ে মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ।

জমিতে পানির অভাবে বিবর্ণ হচ্ছে আমন ক্ষেত। ভরা এই বর্ষা মৌসুমে যান্ত্রিক সেচ দিয়ে আমন ক্ষেত রক্ষার চেষ্টায় কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আমনের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে প্রচণ্ড খড়তাপে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, চিরায়িত নিয়ম অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আষাঢ়ে শুরু হওয়া বৃষ্টি শ্রাবণেও নামে অঝোর ধারায়। দিন-রাত মুশলধারে বৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট ভরে যায়। গ্রীষ্মের মরা নদী যৌবন ফিরে পায়। কৃষককূল কোমর বেঁধে আমন রোপণ শুরু করেন। কিন্তু চলতি বর্ষাকালে শ্রাবণের শুরুতে কিছু বৃষ্টিপাত হলেও সপ্তাহ জুড়ে জেলার কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। চাহিদামতো বৃষ্টির অভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ক্ষেত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এখনো আমন রোপণ করা যায়নি।

সময়মত জমিতে চারা রোপণ করতে না পারায় বীজতলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত আমন মৌসুমের এসময়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ মিলি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু গত এক সপ্তাহে জেলায় গড়ে প্রতিদিন মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়। চলতি মৌসুমে জেলার ৯৪ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে দুই লক্ষ ৫৮ হাজার ২৯৭ টন চাল আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমনের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সদর উপজেলার মালাদাম এলাকার কৃষক আমিনার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। বৃষ্টির অভাবে এসব ক্ষেতে যান্ত্রিক সেচ দিচ্ছি। এখনো কিছু জমি আছে। পানি না থাকায় সেগুলোতে চারা রোপন করতে পারিনি।

এদিকে বৃষ্টির অভাবে বোদা উপজেলার মানিকপীর, ময়দানদিঘী ও বলরামহাটসহ বিভিন্ন এলাকার আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এসব ক্ষেত শুকিয়ে যাবে। এতে আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সদর ইউনিয়নের মোলানী পাড়া গ্রামের কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন রোপণ করেছি। আর তিন বিঘা জমি তৈরি করে রেখেছি। পানির অভাবে রোপণ করতে পারছি না। এজন্য আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছি।

বোদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুনুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রাবন মাসেও প্রচণ্ড রোদ ও খড়া আবহাওয়ায় পরিবেশ বিরূপ আকার ধারণ করেছে। তবে বৃষ্টি না থাকলেও গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন চাষ চলছে।

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান তৌহিদুল বারী বাবু জাগো নিউজকে জানান, এ জেলার মাটি বেলে-দোঁয়াশ। কম বৃষ্টিপাত হলে পানি দ্রুত মাটির নীচে চলে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বৃষ্টিনির্ভর আবাদের মুখাপেক্ষী না হয়ে আমাদের বিকল্প আবাদের চিন্তা করতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সম আশরাফ আলী জাগো নিউজকে জানান, গত এক সপ্তাহে জেলার পাঁচ উপজেলায় গড়ে মাত্র সাত মিলি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত শ্রাবণে গড়ে প্রতিদিন ১০ মিলি. বৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন এলাকায় আমন রোপণ প্রায় শেষ। অনেকে যান্ত্রিক সেচ দিয়ে আমন আবাদ করছেন।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।