দেশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হচ্ছে
দেশে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপিত হচ্ছে। পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলে বর্তমানে যে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে সেখানকার দুই একর জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে এসে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন।
এরপর গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী ২ আগস্ট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
ওই প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বদরুন নেসা, উপ-সচিব নাসরিন মুক্তি, ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, স্থাপত্য বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি আলপনা চাকমা, উপ-প্রধান স্থপতি মঞ্জুরুর রহমান, সহকারী প্রধান স্থপতি এ কে এম মাসুদ পারভেজ ও আনিসুর রহমান।
এ ব্যাপারে শনিবার ডা. সামন্তলাল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।
তিনি জানান, সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এম.এস উচ্চ ডিগ্রিধারী) কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ জন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২ জন।
বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিকেল কলেজে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এম. এস ও মহাখালীর বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) এ এফসিপিএস কোর্সে প্রতি বছর হাতেগোনা ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।
পৃথক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) বা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। এ প্রস্তাব তৈরির পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
পরবর্তীতে এটি একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়নে বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রতি বছর বহির্বিভাগে প্রায় ৩৫ হাজার ও ইনডোরে প্রায় ৬ হাজার রোগী ভর্তি হয়।
রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর পোড়া রোগীদের চিকিৎসার দুরবস্থার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি সারাদেশে বার্ন ইউনিট খোলার নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশে বর্তমানে সীমিত পরিসরে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বার্ন ইউনিট চালু হয়েছে।
জানা গেছে- চাঁনখারপুলের যে স্থানটিতে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান চলছে সেটি অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানকার দুই একর জমিতে কমপক্ষে ১০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপিত হবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির রোগীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পৃথক ব্লক থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়নের মাধ্যমে পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এমইউ/এসএইচএস/একে/আরআই