চুন থেকে পান খসলেই নেমে আসতো নির্যাতনের খড়গ
পাবনা শহরের খেয়াঘাটপাড়ায় গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী কলেজ অধ্যাপক ইমাম হোসেনকে (৩৫) ও স্ত্রী কামরুন্নাহার মৌসুমীকে (২৬) পুলিশ আটক করেছে। ইমাম হোসেন পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার তরুন মেরুয়া গ্রামের আবুল হাফিজের ছেলে।
আহত গৃহকর্মী তাসলিমা (২২) গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের হরতকিরটেক গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে। সোমবার রাতে আহত গৃকর্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পুলিশ অভিযুক্ত স্ত্রী মৌসুমী এবং তার স্বামীকে আটক করে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, পাবনা শহরের খেয়াঘাটপাড়া এলাকার সুব্রত চক্রবর্তীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন ইমাম হোসেন দম্পতি। তার ভাড়া বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন তাসলিমা খাতুন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কাজের দোহাই দিয়ে গৃহকর্মী তাসলিমা খাতুনকে বটি ও লাঠি দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালাতেন মৌসুমী। তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের দাগ রয়েছে। দিনের পর দিন মৌসুমীর শারীরিক নির্যাতনে মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে গত ১১ জুলাই সকালে আবর্জনা ফেলার নাম করে বাসা থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন গৃহকর্তা ইমাম হোসেন।
এদিকে সোমবার রাতে আহত তাসলিমাকে রাস্তায় অভুক্ত অবস্থায় কাতরাতে দেখে তাকে গৃহকর্তার বাসায় পৌঁছে দেয়ার পাশাপশি পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী। রাত দশটার দিকে পুলিশ বাসা থেকে তাসলিমাকে উদ্ধার এবং নির্যাতনকারী মৌসুমী ও তার স্বামী ইমাম হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে নির্যাতিতা তাসলিমা সাংবাদিকদের বলেন, কাজ করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই তার ওপর নেমে আসতো গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীর অত্যাচার। সামান্য অপরাধে বটি দিয়ে তাকে কোপানো হয়। পেট পুরে খেতেও দেওয়া হতো না তাকে। তাসলিমা খাতুন আরো জানান, মৌসুমী ম্যাডাম প্রায়ই আমার ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালাতেন। কখনো বটি দিয়ে কোপাতেন, কখনো লাঠি দিয়ে মারপিট করতেন। এজন্য ভয়ে আর ওই বাসায় যাইনি।
বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারাও জানান, প্রায় প্রতিদিনই তাসলিমাকে নির্যাতন করতেন মৌসুমী। তারা উচ্চস্বরে কান্নার শব্দ পেতেন, এলাকাবাসী কাজের মেয়ের ওপর এমন নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন।
এদিকে, মৌসুমী ও তার স্বামী ইমাম নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, তাসলিমার শরীরে কাটা দাগ আগে থেকেই ছিল। আমরা মাঝে মধ্যে তার ক্ষতস্থান, ড্রেসিং করে দিতাম।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসানুল হক জাগো নিউজকে জানান, এলাকাবাসীর দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আহত গৃহকর্মী তাসলিমাকে উদ্ধার করি এবং অভিযুক্ত দম্পতিকে আটক করেছি। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
একে জামান/এমজেড/আরআইপি