এখনো বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ওষুধ


প্রকাশিত: ০৪:২৬ এএম, ২৫ জুন ২০১৫
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে নিষিদ্ধ ওষুধ এখনো অবাধে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দেশিয় ছয়টি ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে। অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু কোম্পানি এসব ওষুধের উৎপাদন করে ফার্মেসিতে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় চিকিৎসকরাও রোগীকে এই নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন।

নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ ছয়টি হলো (জেনেরিক নাম) প্লাইওগ্লিটাজন, রিজাগ্লিটাজন, ফ্লপেনথিক্সল-মেলিট্রাসেন, গ্ল্যাটিফ্লক্সসিন, টগাসেরড, সিবুট্রামিন, ডেনজিট। এসব ওষুধ এতদিন ডায়াবেটিস, সংক্রমণ, হৃদরোগ, চোখের সমস্যা ও মানসিক রোগের চিকিৎসায় উৎপাদন ও বিপণন হয়ে আসছিল।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের খ্যাতনামা ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ১৬ সদস্যের অ্যাডভারস ড্রাগ রিঅ্যাকশন (এডিআর) অ্যাডভাইজারি কমিটি এসব ওষুধকে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিলের সুপারিশ করেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত ১২ মার্চ সবগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে।

একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিভিন্ন গবেষণায় এসব ওষুধ সেবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অন্ত্রে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ওষুধগুলো বহু বছর আগে থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল ঘোষিত ওষুধগুলো সম্পর্কে বেশিরভাগ চিকিৎসক, ফার্মেসি মালিক ও কর্মচারীরা জানেন না। এ সুযোগে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা নিষিদ্ধ হওয়ার তথ্য গোপন করে অপেক্ষাকৃত কম দামে ওষুধগুলো বিক্রি করছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, যেকোনো ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার পর সেই ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করা গুরুতর অপরাধ। তারা জানান, যে ছয়টি ওষুধ বাতিল করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল।

তবে নিষিদ্ধ ওষুধ বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের কানেও এসেছে। খুব শিগগিরই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছয়টি ওষুধের একটি ফ্লুপেনটিক্সল যা মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা ও অবসাদ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। ওষুধটির জেনেরিক নাম ফ্লুপেনটিক্সল হলেও দেশের বাজারে এ ওষুধটি লিনজিট, মেলিক্সল, এনজেনটা, ডেলিটা ও ফ্রেনজিট নামে উৎপাদিত হয়।

সরেজমিনে আজিমপুর, নিউমার্কেট, কলাবাগান, এলিফেন্ট রোড এলাকার তাহসিন ফার্মেসি, সিরাজ ফার্মেসি, লিটন ফার্মেসি, সারওয়ার ফার্মেসিসহ বেশ কিছু ফার্মেসি ঘুরে দেখা গেছে, দেশের শীর্ষ কয়েকটি কোম্পানির এ ওষুধটি অবাধে বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ বিক্রেতাই জানেন না ওষুধটি বিক্রি নিষিদ্ধ। তারা জানান, কোম্পানিগুলো এখনো এসব ওষুধ সরবরাহ করছে। এ ওষুধটি চিকিৎসকরাও প্রেসক্রাইব করছেন বলে তারা জানান।

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় এ ওষুধটি অনেক আগে থেকে নিষিদ্ধ বলে জানা গেছে। চোখের রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত গ্ল্যাটিফ্লক্সাসিন (জেনেরিক) দেশীয় বাজারে গ্যাটিফ্লক্স, গ্যাটি নামে উৎপাদিত হয়। এটি ড্রপ ও ট্যাবলেট দুই আকারে বাজারে রয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, এ ওষুধটির সরবরাহ রয়েছে। তবে ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, চোখের ড্রপটির উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়নি। ওষুধটি অন্ত্রে ঘা তৈরি করার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে নিষিদ্ধ হয়।

ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ প্লাইওগ্লিটাজন বেশ কয়েকটি কোম্পানি সাগালিট, পায়োডার ও টস নামে উৎপাদন করতো। এ ওষুধ ব্যবহারে অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়। কিছু কিছু ফার্মেসিতে এসব ওষুধ এখনো বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

একই রোগে ব্যবহৃত রিজাগ্লিটাজন বিভিন্ন কোম্পানি রোমেরল, রোজলিট, সেনসুলিন নামে বিক্রি হতো। তবে বাজারে এ ওষুধটির সরবরাহ নেই। প্লাইওগ্লিটাজন ও রিজাগ্লিটাজন সেবনে হৃদযন্ত্রের ঘা ও হৃদরোগের ক্রিয়া বন্ধের মারাত্মক ঝুঁকি থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এটি নিষিদ্ধ করে।  

সিবুট্রামিন দেশের বাজারে ওবেনিল ও সুবুলিন ইত্যাদি নামে বিক্রি হয়। ওজন কমাতে এ ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। ওষুধটি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

এমইউ/এসআরজে/বিএ/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।