২১নং ওয়ার্ড : প্রচারণা চালাতে পারছেন না কোন প্রার্থী


প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

সিটি নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। কিন্তু এখনো সব এলাকায় গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২১ নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী। শুধু বিএনপি প্রার্থীই নয় এই তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এম এ হামিদ খানও। এই ওয়ার্ডে প্রচার প্রচারণায় একক আধিপত্ত বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বিরুদ্ধে। আর তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যরা।

প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকারও হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এম এ হামিদ খানের নেতাকর্মীরা - এমন অভিযোগও ওঠেছে।

এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এম এ হামিদ খানকে রাজনীতির কুলাঙ্গার ও বিএনপির দালাল হিসেবে উপস্থাপন করে পোস্টারও ছাপিয়েছে সচেতন আওয়ামী নাগরিক নামে একটি সংগঠন। পোস্টারে লেখা রাজনীতির কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পোস্টারে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর সাথে এম এ হামিদ খানের ঘনিষ্ঠতার দুটি ছবিও ছাপা হয়েছে।

এদিকে আসাদের পক্ষে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারা দলের নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আসাদকে ওই এলাকার প্রার্থী হিসেবে নতুন করে ঘোষণা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল বুধবার সাঈদ খোকনের ছাত্রলীগের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কাউন্সিলর প্রার্থীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে আবারও দাবি জানান ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে যে ঢাবি পরিবারের সদস্য। আমরা তাকে নির্বাচিত করে নিতাম। কিন্তু এখন এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যার সাথে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আমরা বলবো আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুণ। তাহলে আমরা ঢাবি পরিবারের সদস্যকে এই এলাকায় কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত করে আনবো।

ঐ দিন একই সুর ছিল শাখা সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফেরও। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে।

সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা, শাহবাগ ও পরিবাগ নিয়ে দক্ষিণের ২১ নং ওয়ার্ড গঠিত। এ ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৪ শত ৯৬ জন। এর মধ্যে ঢাবি এলাকায় ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

এ বিশাল একটি জনশক্তির কাছে প্রচারণা চালাতে না পেরে হতাশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তাদের নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। সবশেষ গত মঙ্গলবারও হামিদ খানের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে আসাদের সমর্থনকারীরা।

একই ধরনের অভিযোগ বিএনপি সমর্থীত খাজা হাবীবেরও। তার প্রচারণা কমিটির সম্বনয়ক মিন্টু বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের আশে-পাশেও যেতে দেয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে আসাদ বলেন, তার জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পাচ্ছেন হামিদ খান। তাই তিনি তার বিরুদ্ধে দল এবং ইসির কাছে নানান অভিযোগ দিচ্ছে। শুধু তাই নয় তার অভিযোগ পরিবাগ এলাকায় তার কোন পোস্টার লাগাতে দেয়া হচ্ছে না। তার নেতাকর্মীদের মারধর করছেন হামিদ খানের লোকজন।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী খাজা হাবীব কোথায়ও প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে পারছেন না। সব জায়গায় ক্ষমতাসীন লোকদের বাধা চলছে বলে অভিযোগ করছেন তার প্রচারণা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মিন্টু।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, আমরা যেখানে যাচ্ছি যেখানেই বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনকি আমাদের প্রার্থী বাড়ীতে এসেও হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আমরা ঢাবি এলাকায় এখনো কোন এজেন্ট ঠিক করতে পারছি না। যারা ইতিপূর্বে ভোটে এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে হমিদ খান জাগো নিউজকে বলেন, আসাদ বাহিনী আমার নেতা কর্মীদের ক্যাম্পাসের দিকে যেতেই দিচ্ছে না। গেলে ঢিল ছুঁড়ে, ধরে মারে। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয় না। সে এলাকায় প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট থাকলেও আমি এখনো কোন পোস্টার লাগাতে পারছি না, প্রচার প্রচারণা চালাতে পারছি না। কয়েকটি পোস্টার লাগানোর পর ছিড়ে ফেলা হয়েছে।

দলের হাই কমান্ডকে এই বিষয়ে অবগত করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানিয়েছি তারা বলেছেন আমরা দেখতেছি। কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও আমি এর কোন সুফল পাচ্ছি না।’

হমিদ খান আরও বলেন, তারা আমাকে এবং আমার নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকিধামকি দেয়। এ বিষয়গুলো আমি ইসিকে জানিয়েছি। তাছাড়া গত সোমবারের ঘটনায় আমি শাহবাগ থানায় একটি জিডি করে রেখেছি।

এদিকে হামিদ খানের সকল অভিযোগ প্রত্যাক্ষাণ করে আসাদুজ্জামান আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি কোন প্রার্থীকে বাধা দেয়ার কে? আমরা জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পাচ্ছেন তিনি। যার কারণে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন তিনি। শিববাড়ী এলাকায় আমি কেন মারামারি করতে যাবো। আমার এতো সময় নেই যে কারো সাথে মারামারি করবো। ঐ সময়টুকু আমি আমার একজন শিক্ষকের দোয়া নিলে আমার একটি ভোট বাড়বে। তাছাড়া তার নেতাকর্মীরা আমাদের পরিবাগ এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না, আমার সকল পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।’

এমএইচ/আরএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।